গুলজারের জীবন গড়ে দিয়েছিলেন এই বাঙালী
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ষাটের দশক। মুম্বই শহরে মার্সিডিজ চালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক বাঙালী। সাদা ধুতি সঙ্গে শার্ট। লম্বা চেহারার মানুষটার সারা শরীরে ছিল আভিজাত্যের ছাপ। তিনি একাধারে সুরকার, গায়ক এবং অবশ্যই একজন প্রযোজক। তাঁর গলায় ছিল জাদু। তিনি আর কেউ নন, বাঙালীর অন্যতম প্রিয় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
এই মানুষটা শুধু কলকাতা নয় রাজ করেছিলেন মুম্বইতেও। তিনি না থাকলে অনেকেই আজ হয়তো শিল্পী হয়ে উঠতে পারতেন না। যেমন তাঁকে ছাড়া অসম্পূর্ণ থাকতো গুলজারের জীবন। বিমল রায় মারা যাওয়ার পর গুলজার-সহ বেশ কিছু মানুষের দায়িত্ব নিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
বিমল রায়ের জন্য কাজ করতেন গুলজার। তাঁর মৃত্যুর পর হেমন্ত কুমার নিজের হিন্দী ছবির গান ও চিত্রনাট্যের কাজের জন্য সঙ্গে নিলেন গুলজারকে। এরপরই হেমন্ত ও গুলজারের চেষ্টায় তৈরী হয়েছিল ‘দীপ জ্বেলে যাই’ ছবির হিন্দী। ওয়াহিদা রহমানকে নিয়ে তৈরী হল ‘খামোশি’। এই ছবির গান ‘হামনে দেখি হ্যায় ইন আঁখো কি মহেকতি খুশবু’ লিখেছিলেন গুলজার। অনেকেই বলেছিলেন, এ আবার কেমন গানটা কবিতার মতো শোনাচ্ছে ! পাত্তা না দিয়ে ওই কলিই গানে রাখতে বলেছিলেন হেমন্তকুমার। এবং এই গান লতা গেয়েছিলেন। নিজে না গেয়ে লতাকে দিয়ে গানটি গাইছিলেন তিনি।
গুলজার ও হেমন্তর মধ্যে সম্পর্ক এতটাই ভাল হয়েছিল যে, গুলজারের বাড়ির প্রথম ডাউন পেমেন্টটাও করে দিয়েছিলেন তিনি। সে সময় গুলজার মেসে থাকেন। নিজের বাড়ি নেই। গান লেখেন। নচিকেতা ঘোষ তাঁর মুম্বইয়ের বাড়িটি বিক্রী করতে চান। তা সেই বাড়ি কেনার ডাউন পেমেন্ট করে দিয়ে এসে গুলজারকে তিনি বলেছিলেন, “কাল নচিকেতা ঘোষের সঙ্গে কথা বলে সই করে এসো। আমি টাকা দিয়ে দিয়েছি।” শুনে অবাক হয়েছিলেন গুলজার।
হেমন্ত কুমার বলেছিলেন, “তোমার চাকরি পাকা। আমি সময় মতো কেটে নেব।” তা আর কখনও কাটেননি তিনি। শুধু গুলজার নন তাঁর থেকে উপকৃত হয়েছিলেন অনেকেই। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গান গাওয়া থামিয়েই সিগারেট ধরাতেন। নস্যি নিতেন। সব শখ তাঁর ছিল একেবারে বাবুদের মতো। আসলে কিছু কিছু মানুষের জন্য মেজাজটাই আসল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও তেমনই মেজাজের রাজা ছিলেন। তাঁর মতো কলার তোলা বাঙালী সে সময় আর কই। যেমন দরাজ গলায় তিনি গাইতেন। তেমন ছিল তাঁর চলাফেরা সব কিছু।