মোদী সরকারের খাম- খেয়ালিপনায় কোটি টাকার অপচয়? কী বলছে CAG?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মোদী সরকারের নানান কাজে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে ক্যাগ। ক্যাগের রিপোর্টে স্পষ্ট হয়েছে মোদী সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে দূরদর্শিতার অভাব। বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা, গরিবের ভাতার অর্থ ব্যয় হয়েছে মোদীর প্রচারের কাজে। সড়ক প্রকল্প, আয়ুষ্মান ভারত, বা বিভিন্ন মন্ত্রকের টাকা জলের মতো খরচ হয়েছে সরকারের বিজ্ঞাপন করতে। ক্যাগের রিপোর্টের ভিত্তিতেই উঠছে অভিযোগ।
সামনে এসেছে, মোদী সরকারের খামখেয়ালিপনার নজির। আধার নথিভুক্তিকরণের কিট, ও নোটের সিকিওরিটি ম্যাগনেটিক থ্রেড, এই দুই বিষয়ে কোটি কোটি টাকা জলে দিয়েছে মোদি সরকার। সুরক্ষার জন্য নোটের ধারে ব্যবহৃত, ম্যাগনেটিক থ্রেড কিনতে ৭ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা খরচ করেছিল মোদী সরকার। কিন্তু তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিক্রি করতে গিয়ে তার দাম কত উঠেছে? মোটে এক টাকা। প্রায় ৮ কোটি টাকার পণ্যের বিক্রয়মূল্য মাত্র ১ টাকা! অবাক হলেও, ইহাই সত্য। অর্থের অপচয় ছাড়া এ জিনিস আর ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। অর্থমন্ত্রকের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়া। আধার নথিভুক্ত করার কিট কিনেও তা ফেলে রাখা হয়েছে। ৫১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা নষ্ট হয়েছে এই খাতে। অর্থমন্ত্রক ও বিএসএনএলের সাফাই মেনে নেয়নি ক্যাগ। তাদের সমালোচনা করেছে ক্যাগ।
সংসদে পেশ করা রিপোর্টে ক্যাগ, ম্যাগনেটিক সিকিওরিটি থ্রেডের অপচয়ের বিষয়ে মধ্যপ্রদেশের হোসেঙ্গাবাদে থাকা সিকিওরিটি পেপার মিলকে কাঠগড়ায় তুলেছে। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত অর্থমন্ত্রকের এই সংস্থা, নাসিকের কারেন্সি নোট প্রেস ও দিওয়াসের ব্যাঙ্ক নোট প্রেসের জন্য নোট ছাপার কাগজ তৈরি করে। নোটে সিকিওরিটি থ্রেডও বসায় তারা। ২০১৪ সালে ১৫ মেট্রিক টন ম্যাগনেটিক সিকিওরিটি থ্রেড কেনে মোদী সরকার। যার অর্ধেক অর্থাৎ ৭.৫ মেট্রিক টন পাঁচ বছর পরও ব্যবহৃত হয়নি। পড়ে পড়ে নষ্ট হয়েছে। সেগুলির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। যা নিয়ে ক্যাগের সরব হয়েছে। ওয়েস্টফুল এক্সপেনডিচার অর্থাৎ অপচয় হিসেবেই এই ঘটনাকে ব্যক্ত করেছে ক্যাগ।
২০১৯ সালে ছয় হাজার আধার এনরোলমেন্ট কিট কেনা হলেও, তার অর্ধেকেরও বেশি কাজে লাগানো হয়নি। ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া বিএসএনএলকে এ কাজের বরাত দিয়েছিল। সরকারি পোর্টাল জেম থেকে ৭৭ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকার কিট কেনা হয়। যদিও মাত্র ৩৪ শতাংশ কাজে লাগানো হয়। ৩,৯৪১টি কিট অপচয় হয়, যার বাজারমূল্য ৫১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা। অপচয়ের জেরে আধার কর্তৃপক্ষ, বিএসএনএলকে ৬৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করে, কিন্তু জনগণের করের টাকা অপচয়ই হয়েছে।
ক্যাগের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাকফুটে মোদী সরকার। যদিও এরপরেও তাদের দাবি, ক্যাগের নাকি বুঝতে ভুল হয়েছে। উল্লেখ্য, ক্যাগের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। অধুনা ক্যাগ কর্তা গিরিশচন্দ্র মুর্মু মোদী সরকারের ঘনিষ্ঠ বলেই রাজনৈতিক মহলে পরিচিত। অডিটর জেনারেল পদে বসার আগে তিনি জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম লেফটন্যান্ট গভর্নর হন। তেমন একটি লোকের অধীনস্থ সংস্থার রিপোর্টে মোদী সরকারকে সমালোচনা করায়, চাপে পড়েছে বিজেপি। রিপোর্টের মোকাবিলা করার পথও তারা খুঁজে পাচ্ছে না।