তাঁর জীবনের গপ্পো জাতীয় পুরস্কার পেল, কিন্তু রুখু মাটির ‘দুখু মাঝি’কে চেনেন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ৬৯ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মঞ্চে সম্মানিত হল দুখু মাঝির জীবন কাহিনীর উপর নির্ভর করে নির্মিত ছবি। কিন্তু দুখু মাঝিকে কি চেনে বাঙালি। সত্যি সত্যিই তিনি রুক্ষ মাটির সন্তান। কিন্তু সেই রুখু মাটিতেই তিনি ফল ফলান। তথাকথিত বিদ্যে তাঁর নেই। কোনওদিন স্কুলের গণ্ডি মাড়াননি। বাঘমুন্ডির সিঁদরি গ্রামের বাসিন্দা দুখু মাঝি, মাত্র ১৫ বছর বয়সেই উপলদ্ধি করেছিলেন, গাছ কত উপকারী। তারপর থেকেই মাঠে-ঘাটে-শ্মশানে গাছ লাগাতে আরম্ভ করেন দুখু। যেখানেই ফাঁকা জায়গা দেখেন, সেখানেই চারা বপন করে, পরিচর্যা শুরু করেন। আজ ৮০ বছর পৌঁছেও তাঁর ক্লান্তি নেই। আজও তিনি গাছ লাগিয়ে চলেছেন অযোধ্যা পাহাড়-লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায়।
তাঁর নেশা বৃক্ষরোপণ করা। বাঘমুণ্ডির চড়িদা-বীরগ্রাম রাস্তা, ডাভা-সিন্দরি রাস্তা, এরকম বেশ কয়েকটি রাস্তা জুড়ে বড় বড় গাছ লাগিয়েছেন দুখু বলেন। এলাকার প্রায় ১৮ কিলোমিটার রাস্তাকে সবুজ করে তুলেছেন তিনি। কেবল গাছ লাগানো নয়, সেগুলো বাঁচানোর দায়ও তাঁর। গাছের বেড়া দিতে গিয়ে কম হ্যাপা পোহাতে হয়নি তাঁকে। শুকনো কাঠের বেড়া দিতে না দিতেই, লোকজন তা জ্বালানির জন্য নিয়ে যায়। চুরি আটকাতে শ্মশান থেকে আধপোড়া কাঠ আর ছেঁড়া নোংরা কাপড় দিয়ে, বেড়াদিতে শুরু করেন তিনি। শ্মশানের আধপোড়া কাঠের বেড়া কেউ ছুঁয়েও দেখত না। স্ত্রী ফুনগি মাঝানও একই কাজে ব্রতী, গাছকে সন্তানস্নেহে বড় করে তোলেন তাঁরা।
স্ত্রী, বিকলাঙ্গ ছেলে নিয়ে দুখুর অভাবের সংসার, ভাঙাচোরা মাটির বাড়ি তাঁর। পরনে সাদা ধুতি, গেঞ্জি। যথসামান্য চাষবাস ছাড়া আয় বলতে বৃদ্ধ ভাতার সামান্য টাকা। বড় ছেলে দিনমজুরি করেন, সে এখন আলাদা থাকে। ছোট ছেলে দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ। প্রতি মাসে চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে যেতে হয়। ছেলে ছাড়াও তিনি ৫ হাজারেরও বেশি গাছের অভিভাবক। সরকারি, বেসরকারি সংস্থা থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন। বনদপ্তর পাওয়া সাইকেলে চড়ে একটি বালতি আর চারাগাছ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন, ফাঁকা জায়গা দেখলেই চারাগাছ লাগিয়ে ফেলেন দুখু। এই তাঁর জীবন। এটাই অনন্য করে তুলেছেন তাঁকে, আজ তাঁর জীবন কাহিনীই জিতে নিল সেরার শিরোপা।