কেন্দ্রের টাকা পেতে মানতে হবে মোদীর কথা? ব্যাপারখানা কী?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: টাকা পেতে গেলে শুনতে হবে মোদীর সরকারের ফরমান? বিরোধীরা অভিযোগ করে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাজ্যগুলির অধিকারে হস্তক্ষেপ করে চলেছে মোদী সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ঘটনা প্রমাণ করেছে, সে অভিযোগ কার্যত সত্যি। লোকসভা ভোট এগিয়ে আসতেই ক্রমে বাড়ছে হস্তক্ষেপের পরিমাণ। নিয়ম অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ নির্দিষ্ট খাতেই দেওয়া হয়। ব্যয়বরাদ্দ সঠিকভাবে খরচের শংসাপত্র রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রকে পাঠায় রাজ্য সরকার। জিএসটি ক্ষতিপূরণ বা রাজ্যকে দেওয়া আদায়ীকৃত করের ক্ষেত্রে সে নিয়ম নেই। এই খাতের টাকায় কিন্তু মোদী সরকার কোনও নির্দেশিকা বা ফরমান জারি করতে পারে না। সেই টাকা রাজ্য কোন খাতে খরচ করবে, তা তাদের ব্যাপার। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো বিশেষ সহায়তা বাবদ কোনও অর্থ বরাদ্দ হলেও কেন্দ্র কোনও শর্ত আরোপ করে না। সে কাঠামোও ভাঙতে চলেছে, জারি হচ্ছে নির্দেশিকা। তাও আবার ঋণ বরাদ্দের ক্ষেত্রে।
করোনাকালে বিনা সুদের ঋণ হিসেবে দেশের সব রাজ্যকেই আর্থিক কিস্তি দেওয়া হয়েছিল, তাতেও শর্ত চাপাচ্ছে মোদী সরকার। সেই টাকা পেতেও মোদী সরকার নির্দেশিত সংস্কার কর্মসূচি মানতে হবে। কোন খাতে খরচ করা হবে, তাও বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। আবাসন, পরিবহণ, স্বাস্থ্য, নগরোন্নয়ন, গ্রন্থাগার, ডিজিটাল পরিকাঠামোর মতো কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ওই টাকা খরচ করতে হবে। আর্থিক সহায়তায় বিনা সুদের ঋণের টাকা রাজ্য ইচ্ছামতো কোনও খাতে ব্যবহার করতে পারবে না বলেও বিধান দিচ্ছে মোদী সরকার।
করোনাকালে রাজ্য সরকারগুলির আর্থিক টানাটানি শুরু হয়েছিল। রাজ্যগুলি সম্মিলিতভাবে জিএসটি বাবদ ক্ষতিপূরণের মতো আলাদা করে আর্থিক অনুদানের দাবি জানিয়েছিল মোদী সরকারের কাছে। জিএসটি ক্ষতিপূরণের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছিল। লকডাউনের কারণে শিল্প-বাণিজ্য কারখানা সব বন্ধ হওয়ায় আর্থিক লেনদেন ছিলই না প্রায়। রাজ্যগুলির আয় ছিল একেবারে তলানিতে। কিন্তু বারবার দরবার করার পরেও, অর্থমন্ত্রক অনুদান দিতে রাজি হয়নি। রাজ্যগুলিকে বিনা সুদে ৫০ বছরের ঋণ দিতে রাজি হয়নি মোদী সরকার। তারপর রাজ্যগুলির হয়ে কেন্দ্রই ঋণের টাকা সংগ্রহ করে ও রাজ্যগুলিকে নিয়ম করে দেয়। চলতি অর্থ বছরের প্রথম কিস্তির ঋণ দেওয়া হয়েছে। এখন মোদী সরকার মনে করছে, দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেতে হলে যাবতীয় শর্ত পূরণ করতে হবে। নির্ধারিত কাজে অর্থ ব্যয় না করলে, পরের কিস্তি পাবে না রাজ্যগুলি।
অর্থমন্ত্রক তরফে জানা যাচ্ছে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ওই খাতে মোট ৯৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৮১ হাজার কোটি দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে ৮০ হাজার কোটি বরাদ্দ হয়েছে। ৪০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাকি টাকা পেতে ১৬ রাজ্যকে মোদী সরকারের বিধান মানতেই হবে। এতেই রাজ্যগুলির সঙ্গে মোদী সরকারের বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। রাজ্যগুলির বক্তব্য, তারা ঋণ নিচ্ছে। তারাই শোধ করবে। মোদী সরকার কোনও অনুদান দিচ্ছে না। সেক্ষেত্রে কেন মোদী সরকার শর্ত দিচ্ছে, উঠছে প্রশ্ন।