দেশ বিভাগে ফিরে যান

BJP-র পাতা ফাঁদে এবারও পা দিলেন না অধীর! প্রত্যাখ্যান করলেন মোদী-শাহদের প্রস্তাব

September 3, 2023 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: লোকসভার নেতা তথা বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে বিজেপি’র একটা অদৃশ্য সম্পর্ক রয়েছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক মহলে একটা জল্পনা চলছে। এই জল্পনা আরও বেড়ে গেল শনিবার সন্ধ্যায় যখন ‘এক দেশ এক ভোট’ (ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন) নীতি রূপায়ণের কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করল কেন্দ্র। এই কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন অধীর। কিন্তু রাতে সেই জল্পনায় জল ঢেলে দিলেন অধীর স্বয়ং। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ‘‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি রূপায়ণের জন্য কেন্দ্র দ্বারা গঠিত ৮ সদস্যের কমিটির সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে ঐ কমিটি থেকে নিজের নাম প্রত্যাহরের বিষয়টি জানিয়েছেন। এর ফলে অনেকে বলছেন বিজেপি’র পাতা ফাঁদে এখনই ধরা দিতে চান না অধীর।

নিজের বিজেপি’র সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে ‘জলঘোলা’ বন্ধ করতে কয়েকদিন আগে সংবাদমাধ্যমকে অধীর বলেছিলেন, ‘‘সুর নরমের বিতর্কটাই অবান্তর! পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ও বিজেপির মেরুকরণের আবহ কাটতে শুরু করেছে। তৃতীয় শক্তি হিসেবে বাম ও কংগ্রেস ধীরে ধীরে জমি উদ্ধার করছে। সংখ্যালঘুদের একাংশ তৃণমূলের দিক থেকে সরে আসছেন। কিন্তু বিজেপি চায় না যে, তৃতীয় শক্তি তৈরি হোক, তাতে তাদের অসুবিধা। তাই তারা এই কংগ্রেস বা সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের বন্ধুত্বের গল্প তৈরি করছে। যাঁরা এই নিয়ে কথা বলছেন, তাঁরা বিজেপির সুরেই চলছেন।’’

‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি রূপায়ণের কমিটিতে অধীরের নাম ছাড়াও রয়েছেন বিজেপি নেতা তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ, প্রাক্তার মুখ্য ভিজিলেন্স কমিশনার সঞ্জয় কোঠারি, আইনজীবী হরিশ সালভে, এবং ডঃ সুভাষ সি কাশ্যপ, যিনি লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ইস্তেহারেও ‘এক দেশ, এক ভোট’ ব্যবস্থা চালু করার কথা বলেছিল বিজেপি। এবার ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই এই ব্যবস্থা চালু করার জন্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই কমিটি গঠন করে ফেলেছে গেরুয়া শিবির।

কিন্তু কেন অধীর রঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে বিজেপি’র যোগাযোগের বিষয়টি বারংবার উঠছে? তার পিছনে রাজনৈতিক যুক্তিটাই বা কী?

অধীরের সঙ্গে বিজেপি’র সম্পর্ক নিয়ে যে জল্পনা চলছে সেটা দীর্ঘ সময় ধরে চলছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে মকুল রায় (সেই সময় তিনি বিজেপি’র গুরুত্বপূর্ণ নেতা) বলেছিলেন, ‘অধীর মনেপ্রাণে বর্তমান রাজ্য সরকারের বিরোধী। মমতার জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার তিনি। ফলে তখন বিজেপি ছাড়া অধীরের কাছে কোনও বিকল্প থাকবে না।’
কংগ্রেস ঘনিষ্ট অনেককেই ব্যক্তিগত পরিসরে বলতে শোনা যায়, অধীর চৌধুরী বিজেপি’র দিকে এক পা বাড়িয়ে রয়েছেন বলেই সংসদে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখতে বাধ্য হয়েছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। তা না হলে কংগ্রেসে কি নেতার কম পড়েছে?

সামপ্রতিক সময়ের আরও বেশ কিছু ঘটনা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের নজরে এসেছে। যা নিয়ে অধীর-বিজেপি’র রসায়ন নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। যেমন- বাদল অধিবেশন চলাকালীনই কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে খোঁচা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছিল। একদিকে যেমন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী মণিপুর ইস্যু নিয়ে বক্তব্য রাখেন, তেমনই কেন্দ্রের তরফে জবাবি ভাষণ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের মাঝেই বারংবার উঠে বিরোধিতা করছিলেন কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তাঁকে কটাক্ষ করেই অমিত শাহ বলেন, “আপনার দল বলার সুযোগ দিচ্ছে না। আপনি বিজেপির থেকে সময় নিয়ে কথা বলুন। আমার বক্তব্যের মাঝে বলবেন না।”

আবার অনাস্থা প্রস্তাবে জবাবি ভাষণ দিতে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে তীব্র কটাক্ষ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন অনাস্থা প্রস্তাবে প্রথম বক্তা হিসেবে ছিলেন না অধীর? প্রশ্ন তোলেন তিনি। ‘কলকাতা থেকে বিশেষ ফোন…’ খোঁচাও দিতে ভোলেননি মোদী। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদী বলেন, ” অনাস্থা প্রস্তাবে কিছু অদ্ভূত বিষয় সামনে এসেছে। বক্তাদের তালিকায় বিরোধী দলের সবথেকে বড় নেতার নাম ছিল না। শরদ পাওয়ার ১৯৯৯ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন। ২০০৩ সালে যখন অটলজির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল সেই সময় বিরোধী দলনেতা ছিলেন সোনিয়া গান্ধী। তিনি অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ২০১৮ সালে মল্লিকার্জুন খাড়গে বিরোধী দলনেতা থাকাকালীন তিনি প্রস্তাব দেন। কিন্তু, এবার অধীর চৌধুরীর সঙ্গে কী হল! তাঁর দল তাঁকে বলতেই দিল না।” অধীরকে আলাদা করে মোদীর এই আক্রমণ জোট ‘INDIA’ নিরিখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

মুম্বইয়ে শুক্রবার দুপুরেই শেষ হয়েছে বিরোধী জোট ‘INDIA’র তৃতীয় বৈঠক। তার পর সাংবাদিক সম্মেলনে প্রত্যয়ের সঙ্গে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘‘সবাই মিলে যদি একসঙ্গে লড়াই করা যায়, রাজ্যে রাজ্যে যদি জোট বাঁধা যায়, তা হলে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি হারবে।’’ প্রায় একই সময়ে মুম্বই থেকে দু’হাজার ২০০ কিলোমিটার দূরে ধূপগুড়িতে দাঁড়িয়ে বিজেপি ও তৃণমূলকে এক বন্ধনীতে ফেলে আক্রমণ শানান লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর।

আর শনিবার ‘এক দেশ এক ভোট’ (ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন) নীতি রূপায়ণের কমিটিতে অধীরের নাম! বিজেপি’র তরফে যুক্তি লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবেই অধীরের নাম রাখা হয়েছে কমিটিতে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিষয়টিকে এতটা লঘু করেও দেখতে চান না। তাঁরা এর মধ্যে বিজেপি’র রাজনৈতিক চাল হিসেবেই দেখছেন। অধীরকে গুরুত্ব দিয়ে ‘INDIA’ জোটে ফাটল ধরাতে চাইছে বিজেপি, এরকমটাই মনে করছেন তাঁরা। কিন্তু অধীরের কেন্দ্রের ‘এক দেশ, এক ভোট’ নীতি রূপায়ণের কমিটিতে অধীরের না থাকার সিদ্ধান্তে বিজেপি’র কৌশল বাধাপ্রাপ্ত হল বলেই মনে করছেন অনেকেই।

উল্লেখ্য, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ইস্তেহারেও ‘এক দেশ, এক ভোট’ ব্যবস্থা চালু করার কথা বলেছিল বিজেপি। এবার ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই এই ব্যবস্থা চালু করার জন্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই কমিটি গঠন করে ফেলেছে গেরুয়া শিবির। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একাধিকবার ‘এক দেশ, এক ভোট’ ব্যবস্থা চালু করার কথা বলেছেন। পদ্ম শিবিরের নথিপত্রেও ঘুরেফিরে বিষয়টি এসেছে। তবে আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে এই বিষয়টি নিয়ে সংসদে বিল পাস করানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। আর এই ধরনের পদক্ষেপের বিরোধীতা করছে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Congress, #Amit shah, #Adhir Ranjan Chowdhury, #one nation one election, #Narendra Modi

আরো দেখুন