বাংলার দুগ্গা পুজো: গোবরডাঙা রাজবাড়িতে কীভাবে শুরু হয়েছিল উমা পুজো?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ৩১২ বছরের প্রাচীন গোবরডাঙা রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। এই পুজোকে ঘিরে রয়েছে নিষ্ঠা ও ঐতিহ্যের মিশেল। এই পুজোয় আতিশয্য নেই, বরং রয়েছে উমাকে বরণ করে নেওয়ার এক ঘরোয়া ছবি। নিয়ম মেনে এই জমিদার বাড়িতে আকাশের তারা দেখে প্রতিমা বিসর্জন হয়।
জনশ্রুতি, গোবরডাঙার জমিদার খেলারাম মুখোপাধ্যায় নিঃসন্তান ছিলেন। তাঁর কোনও পুত্র সন্তান ছিল না। তাঁকে একদিন স্বপ্নাদেশে দিলেন মা। জানালেন যমুনা নদীতেই আছে আরাধ্যদেবী। এরপর নদীতে ডুব দিয়ে বড়সড় কষ্ঠিপাথর খুঁজে পান খেলারাম। সেই পাথর কেটেই দেওয়া হয় মূর্তির আকার। প্রসন্নময়ী কালীমাতার মন্দির নির্মাণ হয়ে রাজবাড়িতে। ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রসন্নময়ী মা রাজবাড়ির বংশধরদের পুজো পাচ্ছেন। প্রসন্নময়ী দেবীর পুজো দেওয়ার পরে দুর্গার আরাধনা শুরু। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাজবাড়ির সদস্যরাও পুজোর ক’টাদিন বাড়িতে ফেরেন। সকলে একসাথে আনন্দ উপভোগ করেন। এই পুজো উপলক্ষে রাজবাড়িতে উপচে পড়ে ভিড়।
প্রতিবছর জন্মাষ্টমীর দিন রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে মায়ের কাঠামোতে মাটি দেওয়া শুরু হয়। ঠাকুরদালানে মায়ের প্রতিমা প্রতিষ্ঠা হয় ষষ্ঠীতে। প্রতিমা গড়েন মহিলা শিল্পী। সপ্তমীতে কালীমন্দির থেকে কলাবউ নিয়ে এসে মায়ের অস্ত্র দান করে শুরু হয় সন্ধ্যা আরতি। অষ্টমী, নবমী, দশমীতে নিয়ম মেনে শাস্ত্রমতে পুজো হয়।
শোনা যায়, একসময় এই পুজোতে মোষ বলির প্রচলন ছিল। পরে তা পাঁঠা বলিতে রূপান্তরিত হলেও ৯৭ সালে বলিপ্রথা নিয়ম করে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে চাল কুমড়ো ও আখ বলি দেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, মুখোপাধ্যায়দের বংশধররা যশোরে পুজোর শুরু করেছিলেন। বংশের আদিপুরুষ রামরাম মুখোপাধ্যায় উমার আরাধনা শুরু করেন যশোরের সারশা এলাকায়। পরে তাঁর বংশধররা গোবরডাঙায় চলে আসেন। পুত্র শ্যামরাম মুখোপাধ্যায় গোবরডাঙার ইছাপুরে চৌধুরিবাড়ির জামাই ছিলেন। শ্যামরামের পুত্রই হলেন খেলারাম মুখোপাধ্যায়। তিনিই মাতুলালয়ে পুজো শুরু করেন। ২৪ পরগনার ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন হিঙ্কল সাহেব। সাহেবের কাজের তদারকি করতেন খেলারাম। তাতে খুশি মাতুলালয়ের বেশকিছু জমি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ওই ইংরেজ সাহেব। সেখানেই তৈরি হয় রাজবাড়ি। একসময় রাজবাড়িতে কামান দেগে সন্ধিপুজোর ঘোষণা হত। তবে সসব এখন ইতিহাস।
পথ নির্দেশ: