মোদীর ‘অমৃতকালে’ কর্মহীনতার জ্বালায় জ্বলছে গ্রামীণ ভারত
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে গ্যারান্টি দিচ্ছেন যে তাঁর সরকারের তৃতীয় মেয়াদে (২০২৪ লোকসভা নির্বাচন) তিনি ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ অর্থনীতিতে পরিণত করবেন। এই গ্যারান্টি দিয়ে মোদী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ-র জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার কথা তুলে ধরছেন।
কিন্তু বাস্তবটা কী? অমৃতকালের প্রচার চালানো হচ্ছে, জি-২০’র মঞ্চ ব্যবহার করে প্রচার চলছে, ডাকা হয়েছে সংসদের বিশেষ অধিবেশন। অথচ প্রদীপেরই তলায়ই অন্ধকার। শহরে কাজ নেই, গ্রামীণ ভারতেও কর্মসংস্থান কমছে। সর্বত্রই বেকারত্বের যন্ত্রনা। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে মূল্যবৃদ্ধি। এই জোড়া সঙ্কটে নরেন্দ্র মোদির ‘নয়া ভারত’ এখন দৃশ্যতই কোণঠাসা। প্রধানমন্ত্রী আচ্ছে দিনের জন্য আরও ২৫ বছর অপেক্ষা করতে বলছেন, আর এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ধুঁকছে গ্রামীণ অর্থনীতিও। গরিব মানুষের কাছে তাহলে বাঁচার উপায় কী?
চলতি অর্থবর্ষে (২০২৩-২৪) ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের চাহিদা বাড়ছে লাগাতার। মে মাসে রেকর্ড সাড়ে ৩ কোটি পরিবার ১০০ দিনের কাজ চেয়ে আবেদন করেছিল। বর্ষার মরশুমে আশা করা হয়েছিল, এক ধাক্কায় সেই চাহিদা অনেকটাই কমবে। অন্তত আগের কয়েক বছরে তেমনই প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগস্টে ১০০ দিনের কাজের আবেদন করেছে ২ কোটি পরিবার, যা বেনজির এবং গত আর্থিক বর্ষের থেকে অনেক বেশি।
তথ্য বলছে, বিস্কুট থেকে স্কুটার—সব পণ্যেরই বিক্রির হার কমেছে গ্রামীণ এলাকায়। বিস্কুট শিল্পমহলের আশা ছিল, তাদের বিক্রির হার অন্তত ৬ শতাংশ বাড়বে। সেটা বাড়ছে খুব বেশি হলে ১ থেকে ২ শতাংশ। বর্ষায় ঘাটতির জন্য সঙ্কট আরও বেড়েছে। ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস (এফএমসিজি) অর্থাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য বা ভোগ্যপণ্য বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে গ্রামীণ ভারতে। আর শহর? একঝাঁক বেসরকারি সমীক্ষক সংস্থার রিপোর্ট বলছে, আগস্ট মাসে শহুরে এলাকাতেও আধুনিক সেক্টরে চাকরি কমেছে। ৩ শতাংশ কমেছে ই-রিক্রুটমেন্ট। কর্মসংস্থান সংক্রান্ত সবথেকে বড় প্ল্যাটফর্ম নকরি জবস্পিক ইনডেক্স অনুযায়ী, বিমা, তথ্য-প্রযুক্তি, অটোমোবাইল, চিকিৎসা পরিষেবা এবং বিপিও—প্রতিটি সেক্টরে গত কয়েক বছরের তুলনায় জুলাই-আগস্টে নিয়োগ আচমকা কমেছে ৬ শতাংশ।
গ্রামীণ অর্থনীতিই বস্তুত ভারতের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। লকডাউনের প্রভাব কাটিয়ে সবার আগে গ্রামীণ অর্থনীতিই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। সৌজন্যে সেই ১০০ দিনের কাজ। অথচ এই প্রকল্পই কি না মোদী সরকারের চক্ষুশূল! প্রধানমন্ত্রীর নিজের বিশ্লেষণে, গর্ত খোঁড়ার প্রকল্প! না হলে অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম হওয়া সত্ত্বেও বরাদ্দ ছাঁটাই হবে কেন? ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১০০ দিনের কাজে ৯৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ও খরচ হয়েছিল। আভাস ছিল স্পষ্ট, প্রকল্পের চাহিদা বাড়ছে। তারপরও ২০২৩ সালের বাজেটে এই খাতে মাত্র ৬০ হাজার কোটি বরাদ্দ করা হল কেন? এপ্রিল থেকে আগস্ট, অর্থবর্ষের প্রথম পাঁচ মাসে লাগাতার কমছে কাজের সুযোগ। আর তা শুধু শহরে নয়, গ্রামেও। চাষের মরশুম মিটে গেলে শহরতলি বা গ্রামের মানুষ কাজ না পেয়ে শহরে আসছেন। এখানেও জ্বালা কর্মহীনতার।