ভারতীয় অর্থনীতির ‘বিকাশ’ তত্ত্ব পুরোটাই ফোলানো ফাঁপানো জুমলা?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: জি২০ সম্মেলনের প্রস্তুতি তুঙ্গে, একে একে রাষ্ট্রপ্রধানরা আসতে আরম্ভ করছেন। মোদীও তাঁদের সামনে উন্নত ভারত, আর ভারতের উত্তরণকে তুলে ধরতে মরিয়া। তাঁদের বিলাসবহুল থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, সোনা রুপোর থালায় তাঁদের খাবার দেওয়া হবে। কিন্তু সবাটাই যে লোক দেখানো, কারণ উল্টো দিকের ছবিটা কাঁটা হয়ে ধরা দিচ্ছে। রাষ্ট্রপ্রধানরা যে’সব রাস্তা দিয়ে যাবেন তার দু’পাশ ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। পাছে মোদীর ভারতের কঙ্কালটা বেরিয়ে পড়ে। আড়ালে ওপাশে রয়েছে বসতি, যেখানে অনিশ্চিয়তার মধ্যে দিনগুজরান চলে। রাস্তার দু’ধারে থাকা দোকান, খাবারের স্টল সব উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঠিক যেমনটা ট্রাম্পের ভারত সফরে করেছিলেন মোদী, এ যেন তারই ‘অ্যাকশন রিপ্লে’।
মোদী মেকি ছবি তুলে ধরতে মরিয়া বিশ্বের সামনে। ভারতে জিডিপি বৃদ্ধিকে দেশের উত্তরণের সূচক হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। ‘world’s fastest-growing major economy’ হিসেবে ভারতে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে বটে কিন্তু সত্যিটা কী? চলতি অর্থ বছরের দ্বিতীয় কোয়াটারে জিডিপির বৃদ্ধি হার যে ৭.৮ শতাংশ?
আদপে সংখ্যা, পরিসংখ্যান, অর্ধ সত্য ভাষণের মাধ্যমে আসল সত্যিকে লুকিয়ে দেওয়া চেষ্টা হচ্ছে। জীবন ধারণের জন্য দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নিরন্তন সংগ্রাম চালাচ্ছে, বৈষম্য বাড়ছে, দিনগুজরান সাধারণে পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে, পাশাপাশি চাকরি, কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা মাথাচাড়া দিচ্ছে। জিডিপি বৃদ্ধির হারেও রয়েছে রহস্য। দেশের জিডিপির সর্বশেষ পরিসংখ্যানে অসঙ্গতি রয়েছে। সাফ কথায়, আয়-ব্যয়ের ফারাকের দ্বারা জিডিপি গণনা করা হয়; দেশীয় আয় (পণ্য উৎপাদন এবং পরিষেবা প্রদানের দ্বারা অর্জিত আয়) এবং ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য (পণ্য ক্রয় এবং পরিষেবাগুলি পেতে বাসিন্দারা ও বিদেশীরা যা প্রদান করে)। তত্ত্বগতভাবে ব্যয় ও আয়ের সমান হওয়া উচিত, কারণ ক্রেতারা কিনলেই উৎপাদনকারীরা আয় করতে পারে। আয় ও ব্যয়ের অনুমান সর্বত্র সমান হয় না। বৃদ্ধির হার গণনা করায় ক্ষেত্রে আয়, ব্যায়ের অসঙ্গতির প্রবণতা রয়েছে। এই বৃদ্ধি হার থেকেই অর্থনৈতিক ক্ষমতা মূল্যায়ন করা যায়।
ইন্ডিয়ান ন্যাশনল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসের সর্বশেষ প্রকাশিত রিপোর্টটিতে দেখা যাচ্ছে, এপ্রিল-জুন মাসে উৎপাদন থেকে বার্ষিক ৭.৮% হারে আয় বৃদ্ধি পেলেও ব্যয় বেড়েছে মাত্র ১.৪%। উভয় গণনা প্রক্রিয়াতে স্পষ্টতই বহু ত্রুটি রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এনএসও আয়কে সঠিক হিসাবে বিবেচনা করে এবং ব্যয়কে আয়ের সমান হিসেবে ধরে নেয়। সুস্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গণনার যে স্ট্যান্ডার্ড নিয়ম রয়েছে এখানে তা লঙ্ঘন করা হয়েছে। বৈষম্যর পাশাপাশি পরিসংখ্যানগত তথ্যের অসম্পূর্নতা রয়েছে। এনএসও এমন এক সময়ে বাস্তবতাকে আড়াল করছে, যখন ভারতীয়রা আর্থিকভাবে কষ্ট দিন কাটাচ্ছে এবং বিদেশীরা ভারতীয় পণ্যের প্রতি আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আয় এবং ব্যয় উভয়কেই অর্থনৈতিক সমষ্টি হিসেবে গণ্য করা, তার ভিত্তিতে অর্থনীতির অবস্থা মূল্যায়ন করাই সঠিক পদ্ধতি। অস্ট্রেলিয়া, জার্মান এবং যুক্তরাজ্যের সরকার আয় এবং ব্যয় উভয় দিক থেকে তথ্য ব্যবহার করে তাদের রিপোর্ট করে জিডিপির মান নির্ধারণ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার ব্যয়কে উপজীব্য করে পরিমাপ করে, ভারতে আয়কে মাপকাঠি ধরা হয়।
মার্কিন ব্যুরো অফ ইকোনমিক অ্যানালাইসিস আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্যর গড় পরিমাপ করে। সফরে যদি এই পদ্ধতিতে জিডিপির বৃদ্ধি হার গণনা করে, সেক্ষেত্রে দেশের সাম্প্রতিক বৃদ্ধি হার ৭.৮ শতাংশ থেকে ৪.৫ শতাংশে নেমে আসে। ভারতে সর্বশেষ জিডিপি বৃদ্ধির হারের তথ্যই বলে দেয়, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার মন্থর, ক্রমবর্ধমান আর্থিক বৈষম্য এবং চাকরির অভাব এই মন্থরাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটাই বলে দেয়, ভারতীয় অর্থনীতি কেন কর্মসংস্থান তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে।