বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

আলি সাহেবের বাণীবন্দনা

September 13, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আলি সাহেব অর্থাৎ সৈয়দ মুজতবা আলি ছিলেন আদ্যন্ত আড্ডাপ্রিয় মানুষ। তাঁর রসবোধ আর পাণ্ডিত্য ছিল ঈর্ষণীয়। মুজতবা আলির ডাকনাম ছিল ‘সিতারা’। প্রিয়জনদের কাছে আলি সাহেব ছিলেন আদরের ‘সীতু’। সিলেটের ছেলে সীতু পড়তে এসেছিলেন রবি ঠাকুরের বিশ্বভারতীতে। ১৯২১ সালে মুজতবা আলি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথমদিকের ছাত্র। যদিও মুসলমান ছাত্রকে ভর্তি হতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ প্রথম দেখায় বলেছিলেন, ‘ওহে, তোমার মুখ থেকে তো কমলালেবুর গন্ধ বেরোচ্ছে!’ মুজতবা শ্রীহট্ট তথা সিলেটের লোক। সিলেট কমলালেবুর জন্য বিখ্যাত। রবীন্দ্রনাথ জানতে চেয়েছিলেন, মুজতবা কী পড়তে চান। মুজতবা লিখছেন, “বললুম, তা তো ঠিক জানিনে তবে কোনও একটা জিনিস খুব ভাল করে শিখতে চাই। তিনি বললেন, নানা জিনিস শিখতে আপত্তি কী? আমি বললুম, মনকে চারদিকে ছড়িয়ে দিলে কোনও জিনিস বোধ হয় ভাল করে শেখা যায় না। গুরুদেব আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, এ কথা কে বলেছে? আমার বয়স তখন সতেরো— থতমত খেয়ে বললুম, কনান ডয়েল। গুরুদেব বললেন, ইংরেজের পক্ষে এ বলা আশ্চর্য নয়। কাজেই ঠিক করলুম, অনেক কিছু শিখতে হবে। সম্ভব অসম্ভব বহু ব্যাপারে ঝাঁপিয়ে পড়লুম।’

শান্তিনিকেতনে তিনি সত্যি সত্যিই অনেক কিছু শিখেছেন। সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, উর্দু, ফার্সি, হিন্দি, গুজরাতি, ফরাসি, জার্মান ও ইতালি-সহ পনেরোটি ভাষা শিখেছিলেন। ১৯২৬ সালে বি.এ. ডিগ্রি অর্জন। এরপর আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন। কাবুল যাত্রা তাঁর জীবনে অনন্য মাত্রা যোগ করেছিল। আদপে বাঙালিকে প্রথম আফগানিস্থান চিনিয়েছিলেন তিনিই। দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে তাঁর কাবুল যাত্রার বিবরণ ‘দেশে বিদেশে’। পরে তা বই হয়, সেই বইটির মাধ্যমেই সৈয়দ মুজতবা আলির বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল।

তবে এহেন পণ্ডিতের সঙ্গে সরস্বতীর একটা সম্পর্ক থাকাই স্বাভাবিক, আলি সাহেবেরও তাই ছিল। সৈয়দ মুজতবা আলীর ছেলেবেলায় সিলেটের স্কুলে ছাত্ররা সরস্বতী পুজো আয়োজনের জন্য ফুল চুরি করেছিল। জুটেছিল ব্রিটিশ সাহেবদের কাছে ভর্ৎসনা। সেই তিরস্কারের বিরুদ্ধে স্কুল বয়কট করেছিলেন আলির বন্ধুরা। বয়কটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সদ্যকিশোর মুজতবা আলি।

এর বহুকালের পরের ঘটনা। কোনও এক সরস্বতী পুজোর সকাল, বেলা বারোটা ছুঁইছুঁই। আলি সাহেব তখন গঙ্গার ঘাটে পায়চারি করতে বেরিয়েছেন। এক বৃদ্ধা, সঙ্গে তাঁর ছোট্ট নাতনিকে নিয়ে এগিয়ে এলেন আলি সাহেবের দিকে। উজ্জ্বল বর্ণ, সৌম্য-সুন্দর চেহারার মানুষ ছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলি। তাঁকে পুরোহিত ভেবে বসলেন বৃদ্ধা। কিছু না জেনেই বৃদ্ধার আর্জি, “বাবা আমার বাড়ির পুজোটা করে দাও। পুরুত আসেনি এখনও, আমি পুরুত খুঁজতে বেরিয়েছি। বাচ্চাটা না খেয়ে অঞ্জলি দেবে বলে বসে রয়েছে।”

আলি সাহেব পড়লেন বিপাকে। চোখ পড়ল ছোট্ট মেয়েটার শুকিয়ে যাওয়া মুখটার দিকে। রাজি হয়ে গেলেন পুজো করতে। বৃদ্ধার বাড়িতে সৈয়দ মুজতবা আলি বসে পড়লেন পুরোহিতের বেশে। নির্ভুল সংস্কৃত মন্ত্রপাঠে করলেন বাণী বন্দনা। বাড়ির লোকজনও বেজায় খুশি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Syed mujtaba Ali, #Bani bandana

আরো দেখুন