পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

বাংলার দুগ্গা পুজো: জেনে নিন প্রাচীন মল্লরাজ পরিবারের ত্রিপটে পুজোর ইতিহাস

September 13, 2023 | 2 min read

জেনে নিন প্রাচীন মল্লরাজ পরিবারের ত্রিপটে পুজোর ইতিহাস

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: জিতাষ্ঠমী থেকে শুরু হয় বিষ্ণুপুর রাজ পরিবারের দুর্গাপুজো। এ বছর ১০২৬ বছরে পা দিল মল্লরাজ পরিবারের পুজো। এই রাজবাড়ির দুর্গোৎসবই হল বিষ্ণুপুরের আদি ও প্রধান দুর্গোৎসব। মৃন্ময়ী রূপে দেবী পূজিতা হন বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজ পরিবারের মন্দিরে। পুজো চলে টানা ১৮ দিন। এই বিশেষ দিনগুলিতে পুজো দেখতে বিষ্ণুপুরের বাসিন্দাদের উপচে পড়ে ভিড়। এই উৎসবে সামিল হতে দূরদূরান্ত থেকে জড়ো হন বহু পর্যটক।

অতীতে রাজাদের আমলে পুজোর ঐতিহ্যতে একটুও ভাঁটা পড়েনি। রাজ পরিবারের বংশদরেরা পুরোনো রীতি-নীতি ও ঐতিহ্য বজায় রেখেই আজও দেবী দুর্গা আরাধনা অনুষ্ঠিত হয়। পটপুজো এখানকার পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিষ্ণুপুরের ফৌজদার পরিবারের শিল্পীরাই বড় ঠাকুরানি, মেজ ঠাকুরানি আর ছোট ঠাকুরানি নামের আলাদা ৩ টি পট আঁকেন। দেবী মৃন্ময়ীর প্রতিমার পাশেই তিনটি নির্দিষ্ট জায়গায় একই ভাবে এই ৩ পটের পুজো হয়।

নবম্যাদিকল্প থেকে শুরু হয় বড় ঠাকুরানির পুজো। সেই মতো দেবী মৃন্ময়ীর মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হল বড় ঠাকুরানীর পট। এ দিন সকালে রাজবাড়ি সংলগ্ন দিঘিতে পটের স্নান করান রাজ পরিবারের পুরোহিত। রূপোর পাতে মহিষ মর্দিনী মূর্তি, নাম বড়ঠাকরুণ। তিনি রাজগৃহেই থাকেন এবং নবমীর দিন রাজার ঘর থেকে তাঁকে এনে কৃষ্ণবাঁধে স্নান করিয়ে, নবপত্রিকাসহ পুজো করে দুর্গা মেলায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। নবপত্রিকা হল – ধান্য, মান, রম্ভা, কচু, হরিদ্রা, জয়ন্তী, বিল্ব, দাড়িম ও অশোক। বড়ঠাকরুণৌকে এনে মৃন্ময়ীতলার সামনে শিরীষ গাছের তলায় স্থাপন করে পটে পূজা করা হয়।

মেজ ঠাকুরানির পুজো শুরু হয় দেবীপক্ষের চতুর্থীর দিন থেকে। আর ছোট ঠাকুরানির পুজো শুরু হয় সপ্তমীর দিন থেকে। এই ৩ ঠাকুরানি হলেন দেবী মৃন্ময়ীরই রূপ। বড় ঠাকুরানির ক্ষেত্রে মহাকালী, মেজ ঠাকুরানির ক্ষেত্রে মহালক্ষ্মী আর ছোট ঠাকুরানির ক্ষেত্রে মহাসরস্বতীর স্তোত্রপাঠ করা হয়। রাজ পরিবারের অষ্টমী পুজোও মহাসমারোহে হয়। কামানের তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে সন্ধিপুজোর সূচনা হয়। মাসকলাই বলি হয় অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে। এই রাজবাড়ির দুর্গোৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হল, অষ্টমীতে কামান ফাটানো। রাজবাড়ি সংলগ্ন মুরচার পাহাড়ে সেই কামান ফাটানো দেখার জন্য আজও উপচে পড়ে জনতার ভিড়।

কালিকা পুরাণ মতে হলেও, এই রাজ্যে একমাত্র বিষ্ণুপুর রাজ পরিবারের দুর্গাপুজো হয় বলিনারায়ণী অনুসারে। এখানে পুজো শুরু হয় নবম্যাদি কল্পারম্ভে। মল্ল রাজাদের রাজত্বকালে পুজোয় বলি দেওয়ার প্রচলন ছিল। জানা গিয়েছে, রাজা হাম্বির মল্ল বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পরেই বন্ধ হয়ে যায় বলির প্রথা।

নিয়ম অনুযায়ী আজও প্রতি বছর নবমীর রাতে মন্দিরের গর্ভগৃহে খচ্চড়বাহিনী দেবীর পুজো হয়। অষ্টধাতু নির্মীত বিশালাক্ষ্মী দেবীরও পুজো হয় অষ্টমীর দিন থেকেই। সন্ধিক্ষণে আজও সোনার তৈরি চাঁপা ফুল দিয়ে অঞ্জলি দেন পরিবারের সদস্যরা। বিজয়া দশমীর দিন দেবী মৃন্ময়ীর ঘট বিসর্জনের পরে বড় ঠাকুরানি, মেজ ঠাকুরানি ও ছোট ঠাকুরানির ঘট বিসর্জন হয়। তার পরে পটগুলি চলে যায় রাজবাড়ির অন্দরমহলে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#durga Pujo, #mallaraj family, #tripot pujo

আরো দেখুন