বাংলার দুগ্গা পুজো: পাণ্ডেবেশ্বরের নবগ্রামে তিন শরিকের বাড়ির ব্যঘ্রবাহিনী দুর্গার ইতিহাস
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: শরৎ এলেই শিউলি ও কাশফুল ঘরের মেয়ে উমার আগমনী বার্তা জানান দেয়। বাংলার বিভিন্ন জেলায় কোথাও দেবী মহামায়া রূপে, কোথাও বা অভয়া রূপে আবার কোথাও দেবী ব্যাঘ্রবাহিনী দুর্গা রূপে পুজিতা হয়ে আসছেন।
পশ্চিম বর্ধমান জেলার পাণ্ডেবেশ্বর থানার অন্তর্গত নবগ্রাম গ্রামটিতে মোট ৫ টি পুজো হয়, তবে তার মধ্যে ২টি প্রতিমা পুজো এবং বাকি ৩ টি হয় ঘটে পুজো। আনুমানিক প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ বছরের প্রাচীন এই তিনশরিকের ব্যাঘ্রবাহিনী দুর্গাপুজো হয় এই গ্রামেই। এই পুজোর তিনশরিক হল চ্যাটার্জি, মুখার্জি ও চক্রবর্তী পরিবার। এই পুজোর প্রতিমা তৈরি ও ঢাকিরা বংশপরম্পরায় আজও প্রতিমা তৈরি করতে ও ঢাক বাজাতে আসেন। এখানে দেবীর গায়ের রং তপ্ত কাঞ্চনবর্ণের।
তিনশরিকের পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য গুলি হল পরিবারের কুলদেবতা শ্রী শ্রী রঘুনাথচন্দ্র জীউয়ের ভোগ নিবেদন হয় আগে তারপর দেবী ব্যাঘ্রবাহিনী কে ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগের ক্ষেত্রেও রয়েছে কিছু বিশেষত্ব। পঞ্চ ব্যাঞ্জন সহকারে দেবীকে তিনদিন অন্ন ভোগ দেওয়া হয় এবং তার সাথে থাকে পায়েস ও মিষ্টি। সঙ্গে কচু কুমড়োর তরকারি থাকাটা আবশ্যক। তিনশরিকের পুজোতে বলিদান প্রথা আছে। মহাসপ্তমী তে চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয় এবং মহাঅষ্টমী তে শ্বেতছাগ ও মহানবমীতে কালো ছাগ বলি দেওয়া হয়।
দশমীতে দেবীকে দই ও চিড়েঁ ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয়। অপরাজিতা পূজা, বেল পাতায় দুর্গা নাম লিখে দেবীর চরণে অর্পণ ও যাত্রা বাঁধা তিনশরিকের দুর্গা পুজোর একটি অন্যতম বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও সিঁদুর খেলা ও দেবী বরণ এই পরিবারের পুজোর এক অন্যতম রীতি। দশমীর রাত্রে বিরাট শোভাযাত্রা সহকারে স্থানীয় এক পুকুরে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। ঐতিহ্য ও পরম্পরায় এ পুজো আজও এই পুজো অমলিন। সকলের অংশগ্রহণে চিরায়ত ঐতিহ্যে ও ভাব গম্ভীর পরিবেশে গভীর নিষ্ঠা সহকারে আজও অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে নবগ্রামের এই প্রাচীন দুর্গোৎসব।
পথ নির্দেশ: