মোদী আমলে দফায় দফায় ‘নেটবন্দি’-তে উপার্জন হারাচ্ছে আম জনতা?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ইন্টারনেট পরিষেবা বিচ্ছিন্ন করে সত্যিই কি হিংসা রোখা যায়? বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বদলে মোদী সরকার সবার আগে অশান্ত এলাকার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। এতেই ক্ষতির মুখে পড়ছেন আম জনতা। কারণ অনেকেই পেশাগতভাবে আজকাল ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল, মে মাসে উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন অনেকেই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। জনৈক এক শাড়ি বিক্রেতার অভিযোগ এই ইন্টারনেট বন্ধের জেরে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় কয়েক লক্ষ টাকার উপার্জন তিনি খুইয়েছিলেন। কারণ, তাঁর শাড়ির ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে অনলাইনেই চলে। বস্ত্রবয়ন শিল্পে সঙ্গে মহিলারা বহু মহিলাই সমস্যায় পড়েছে, তাঁরা ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
হিংসা ঠেকাতে ইন্টারনেট বন্ধের হাতিয়ার ব্যবহার করে মোদী সরকার কিন্তু তাতে কি সত্যিই হিংসা বন্ধ হয়? বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র হওয়া পরেও মোদী আমলে গোটা বিশ্বে শেষ সাড়ে নয় বছরে সবচেয়ে বেশি নেট বন্দি হয়েছে ভারতে। নিউইয়র্কের অ্যাক্সেস নাও বলছে, গত বছর ভারতের বিভিন্ন অংশে ৮৪ বার নেট বন্দি হয়েছে। যা ইরান, লিবিয়া এবং সুদানসহ অন্যান্য দেশের সম্মিলিত মোট সংখ্যাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনার অর্ধেকেরও বেশি ভারতে ঘটেছে৷ গোটা দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করেছে ইন্টারনেট। দেশের ১৪০ কোটি মানুষের অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যক মানুষ, এখন ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। দেশের প্রায় ৭০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, গত আট বছরে সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়েছে। আত্মীয়, পরিজন-বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে ব্যাঙ্কের কাজ, সবই এখন অনলাইনে সারতে শিখে ফেলেছে ভারত।
বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, ‘নেটবন্দি’ দরিদ্র প্রান্তিক মানুষদের জীবনকেও প্রভাবিত করেছে। গ্রামীণ কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে ভর্তুকি এবং মজুরি সংগ্রহ, অনলাইন লেনদেন সব কিছু বাধা পেয়েছে। ই-কমার্স সংস্থা এবং বিভিন্ন স্টার্ট-আপ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কোটি কোটি টাকা ধ্বংস হয়েছে।
ইন্টারনেট পরিষেবার হস্তক্ষেপ মৌলিক অধিকার তথা ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সামিল, ইন্টারনেটে বিধিনিষেধ আরোপ ডিজিটাল ইন্ডিয়ার পরিপন্থী। ২০১৫ সালে মোদী ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু লাগাতার ইন্টারনেট বন্ধ কি ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সাক্ষ্য বহন করে।
লাগাতার নেট বন্দির কারণে, মুদি, অ্যাপ ক্যাব ও খাবার সরবরাহকারী সংস্থারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। সম্প্রতি হরিয়ানায় নেট বন্দির জেরে বহু মানুষ আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। কাশ্মীরের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট বন্ধের শিকার। ৩৭০ বাতিলের পর থেকে সেখানে গত চার বছরে প্রায় ৪৯ বার নেট বন্দি করেছে মোদী সরকার। বিভিন্ন সংস্থার দাবি, ইন্টারনেট শাটডাউন স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ এবং অবৈধ। এই মর্মে জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয়েছে।