বাংলার দুগ্গা পুজো: শান্তিপুরে দত্ত পাড়ার রায় বাড়ির পুজো যেন চলমান ইতিহাস
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: নদীয়া জেলার ঐতিহ্যবাহী পুজো নিদর্শন শান্তিপুরের দত্ত পাড়ার রায় বাড়ির পুজো । জানা গিয়েছে প্রায় ৫০০-৬০০ বছরের বেশি প্রাচীন এই বাড়ির দুর্গা পুজো । এই বাড়িতে রয়েছে একটি রাধা কৃষ্ণের বিগ্রহ। দুর্গা পুজোর সময় এই জোড়া বিগ্রহ নিবেদিত ভোগের স্বাদ সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যায় বলে বিশ্বাস এই পরিবারের সদস্যদের।
রথ যাত্রার সময় এই বাড়িতে মাতৃ বিগ্রহের পাটে সিঁদুর চন্দন লেপন করার রীতি প্রচলিত আছে। এখানে দেবী দালানেই তৈরি করা হয় দুর্গা প্রতিমা । ৭টি খাটাল বিশিষ্ট মন্দিরে ৩ পুতুল বিশিষ্ট দেবী মূর্তি এই রাজবাড়ি ছাড়া আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না। এই বাড়ির সুবিশাল দরজা- জানালা ও দরজার খিলান , করি-বড়গার ঘর , ঠাকুর দালানের ভিতর সুউচ্চ জানালা , কাঠের সিঁড়ির ধারে লোহার রেলিং দেখতে কত অজানা ইতিহাস জানতে মন কৌতুহলী হয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, অন্তত ৪০-৫০ ইঞ্চির দুর্গা পুজোর পুষ্প পাত্র শান্তিপুর দত্ত পাড়ার রাজবাড়িতে বিদ্যমান, যা শান্তিপুর ছাড়া আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না। প্রাচীন ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, একসময় এই দত্ত পাড়া রায় বাড়ির থেকে শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল স্কুল এবং শান্তিপুরের গঙ্গায় যাওয়ার একটি গোপন সুরঙ্গ পথ ছিল।
শোনা যায়, শান্তিপুর দত্ত পাড়া রায় পরিবারের মধ্যে উমেশ চন্দ্র রায় ওরফে মতি রায় ছিলেন অন্যতম । তিনি প্রথম জীবনে বর্ধমান রাজার দেওয়ান থাকলেও পরবর্তী সময়ে তিনিই ছিলেন শান্তিপুরের জমিদার। তিনি স্বৈরাচারী হলেও যথেষ্ট প্রজা হিতৈষী ও শিল্প-সংস্কৃতির গুণগ্রাহী । একসময় মতিবাবু দেবী প্রতিমাকে সোনা-রূপোর অলঙ্কারে সাজাতেন এবং বিসর্জনের পর সেগুলি ব্রাহ্মণদের বিতরণ করতেন । হরিদাস রায় ছিলেন এই বংশের শেষ জমিদার ।
বর্তমানে এই বাড়ির প্রতিমা নির্মাণ করেন মৃৎ শিল্পী প্রদীপ পাল । তবে দত্ত পাড়া রায় বাড়ি সুত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৮ পুরুষ ধরে এই বাড়ির প্রতিমা নির্মাণ করে আসছেন প্রদীপ পালের বংশধরেরা।