মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করিয়ে কৃতিত্ব নিতে চাইছেন মোদী, ইতিহাস বলছে অন্যকথা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ছ’মাস বাদে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশের উদ্যোগ নিতে শুরু করল। সংসদের বিশেষ অধিবেশনের প্রথম দিনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে মহিলা সংরক্ষণ বিলে অনুমোদন পেল। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত বিশেষ অধিবেশন চলবে।
মহিলা সংরক্ষণ বিলের অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা, এরকমটাই জানিয়েছেন আধিকারিকরা। অর্থাৎ সংসদের বিশেষ অধিবেশনেই সেই বিল পেশ করা হতে চলেছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। যদিও সংসদে সেই বিল পেশ করা হবে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি।
সোমবার থেকে সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে। তারইমধ্যে সন্ধ্য়া ৬ টা ৩০ মিনিট থেকে বৈঠকে বসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। প্রায় ৯০ মিনিট চলে বৈঠক। সংসদের নতুন ভবনে আজ মঙ্গলবার সেই বিল লোকসভা ও রাজ্যসভায় পেশ করা হতে পারে। ভোটের আগে সরকারের এমন উদ্যোগ দেখেই মাঠে নেমে পড়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূল। তাদের উদ্দেশ্য একটাই মহিলা বিল পাশ করে মোদীকে একা মসিহা হতে না দেওয়া। কারণ, তারা আন্দাজ করছে, মহিলা বিল পাশ করিয়ে পুরো রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইবেন নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি।
ভারতের আইনসভায় ও স্থানীয় প্রশাসনে মহিলা সংরক্ষণ নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনা বহুদিনের। ১৯৭১ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের অনুরোধে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার মহিলাদের সামাজিক মর্যাদা খতিয়ে দেখতে একটা কমিটি গঠন করেছিল। সেই রিপোর্টেই উঠে আসে যে, ভারতে লিঙ্গ বৈষম্য রয়েছে। এ ব্যাপারে সাংবিধানিক দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। ওই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর বিক্ষিপ্ত ভাবে বিভিন্ন রাজ্য স্থানীয় প্রশাসনে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে শুরু করে।
১৯৮৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী (Rajiv Gandhi) কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মার্গারেট আলভার নেতৃত্বে ১৪ জন জনের একটি কমিটি তৈরি করেন। ওই কমিটি মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য ৩৫৩টি সুপারিশ করেছিল। যার অন্যতম ছিল নির্বাচন ব্যবস্থায় মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ। বিশেষ করে পঞ্চায়েত ও পুরসভায়।
রাজীব জমানার ওই সুপারিশগুলিকে সামনে রেখে সংবিধানের ৭৩ ও ৭৪ তম সংশোধনের প্রস্তাব করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও। সংবিধানের সেই সংশোধনের মাধ্যমে পঞ্চায়েত ও পুরসভায় মহিলাদের জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত করা হয়েছিল। মহিলাদের ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার উদ্দেশে যা ছিল ঐতিহাসিক ও কালজয়ী পদক্ষেপ।
নরসিংহ রাও কেবল পঞ্চায়েত ও পুরসভায় মহিলা সংরক্ষণকে সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আইনসভায় মহিলাদের ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের জন্য সংসদে প্রথম বিল পেশ করেছিল দেবগৌড়া সরকার। প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া সংবিধানের ৮১তম সংশোধন প্রস্তাবের মাধ্যমে তা সংবিধান স্বীকৃত করতে চেয়েছিলেন। জাতীয় দলগুলির অধিকাংশ সাংসদ বিলে সমর্থন জানিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মতো পার্টিগুলি তার বিরোধিতা করে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের মধ্যে ওবিসি নেতারা এর বিরোধিতা শুরু করেন।