বাংলার দুগ্গা পুজো: এই রাজবাড়ির পুজো ছিল সুভাষ-গান্ধী-অ্যান্টনি ফিরিঙ্গীর সমাহার
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: হুগলী জেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম শ্রীরামপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। স্থানীয়দের কাছে এই বাড়িরগোস্বামী বাড়ি নামে পরিচিত। এই রাজবাড়ির সাথে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস। প্রায় ৩৪০ বছরের পুরানো দুর্গাপুজোয় এই রাজবাড়িতে আনন্দে ভরে ওঠে। নিয়মরীতি মেনে পুজো শুরু হয় মহাষষ্ঠী থেকে। পুজোর দিনগুলো প্রচুর মানুষের সমাগম হয় এই রাজবাড়িতে।
এই রাজবাড়িতে অনেক শ্যুটিং হয়। ‘ঘরে বাইরে’ থেকে ‘ভুতের ভবিষ্যত’ ছবির শ্যুটিং হয়েছিল এই রাজবাড়িতেই। উত্তম কুমার, সুপ্রিয়া দেবী, সত্যজিৎ রায় সহ চলচ্চিত্র জগতের বহু বিখ্যাত ব্যক্তি পা রেখেছিলেন এই রাজবাড়িতে। শোনা যায়, ত্রিবেণী সম্মেলন উপলক্ষে এসেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। এসেছেন ডাক্তার বিধান রায়। এই বাড়ির আর এক সদস্য তুলসীচন্দ্র গোস্বামী ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশের পছন্দের মানুষ। চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী বাসন্তী দেবী অত্যন্ত স্নেহ করতেন তাঁকে। একইভাবে সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গেও ছিল তুলসীচন্দ্রের বিশেষ হৃদ্যতা। সেই সূত্রে সুভাষচন্দ্রও এসেছেন এই বাড়িতে।
নবাব আলিবর্দি খাঁয়ের আমলে রামগোবিন্দের জায়া মনোরমাকে নিয়ে জলপথে পাটুলি থেকে গঙ্গাসাগরের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। যাত্রাকালে কলকাতার কাছে হঠাৎ মনোরমার সবযন্ত্রণা ওঠে। রামগোবিন্দকে তাই শ্রীরামপুরে থামতে হয়। শেওড়াফুলির রাজা মনোহর রায় এই ঘটনা জনার পর তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করেন। সেই সূত্রে জমিদারি পান রামগোবিন্দ। এই রামগোবিন্দ গোস্বামী শ্রীরামপুর গোস্বামী পরিবারের আদিপুরুষ। তাঁর নাতি হরিনারায়ণ গোস্বামীর আমলে সূচনা হয় দুর্গাপুজোর। জানা যায়, ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথম দুর্গাপুজো শুরু হয় শ্রীরামপুর রাজবাড়িতে।
জানা গিয়েছে, এই রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোয় আসর জমিয়ে গিয়েছেন অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, ভোলা ময়রা থেকে রূপচাঁদ পক্ষী। পরে মূল বসতবাড়ির অনুকরণে প্রাসাদ সংলগ্ন ঠাকুরদালানে রঘুরাম জাঁকিয়ে চালু করেন দুর্গাপুজো। এখানে একচালার মধ্যে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে মা দুর্গার সাথে থাকেন কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী এবং সরস্বতী ঠাকুর। প্রতিমা সজ্জিত হয় ডাকের সাজে।
আজও এই রাজবাড়িতে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। রথের দিন কাঠামো পুজো হয়। তারপর একচালার প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়ে যায়। মায়ের ডাকের সাজ আজও বর্ধমানের পূর্বস্থলী থেকে নিয়ে আসা হয়। অষ্টমীর সন্ধিপুজোয় এখনও পুরনো আমলের পিতলের ১৩৮টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। দশমীর দিন বাড়ির মহিলারা ঠাকুর দালানের বাইরে মাছ ও পান খেয়ে মাকে বরণ করার পর শুরু হয় প্রতিমা নিরঞ্জনের প্রস্তুতি। শ্রীরামপুর রাজবাড়ি ঘাটেই করা হয় প্রতিমা বিসর্জন।
পথ নির্দেশ: