বাংলার দুগ্গা পুজো: শান্তিপুরের বড় মৈত্রবাড়ির পুজো মানেই শাক্ত-বৈষ্ণব ধর্মের পীঠস্থান
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: শান্তিপুরে বড় মৈত্র বাড়ির দুর্গাপুজো মানেই বৈষ্ণব ও শাক্তের মিলনক্ষেত্র। প্রায় ২৩০-২৩৫ বছর ধরে চলে আসছে এই বাড়ির দুর্গাপুজো। এক সময় বন্দুকের গুলি ছুঁড়ে মহাষ্টমীর সন্ধিপুজো করা হত।
এই বাড়ির দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয় ১০ দিন ধরে, পুজো শুরু হয় মহালয়ার পরে প্রতিপদ থেকে। মৈত্র বাড়ির দুর্গামূর্তি নদীয়ার কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির দুর্গামূর্তির অনুকরণে তৈরি। এই বাড়ির দুর্গাপুজো হয় কালিকাপুরাণ মতে এবং এখানে দেবীরূপে পূজিত বৈষ্ণবী। তাই বলি প্রথার প্রচলন নেই।
এক সময় এই বাড়িতেই দূর-দূরান্ত থেকে নর্তকীরা আসতেন, রাতভর গানবাজনা, খাওয়া দাওয়ার আসর বসত। সেই আমলে তাদের প্রত্যেককে দেওয়া হত নগদ এক হাজার টাকা এবং একটি করে হিরের আংটি। তখন পালকি করে কলাবউকে স্নান করাতে নিয়ে যাওয়ার রীতির প্রচলন ছিল।
অদ্বৈতাচার্যের বংশধর রাধামোহন গোস্বামী ভট্টাচার্য্য ছিলেন নাটোরের রাজগুরু। তাঁর মেয়ে রামমণির বিবাহ হয় ফরিদপুরের রামরতন মৈত্রের সঙ্গে। বিয়ের পর পিতার কাছে আবদার করে গোপাল মূর্তি বাড়িতে আনেন। রামমণি বাড়িতে গোপালের মন্দির স্থাপন করে নিত্য সেবা এবং জন্মাষ্টমী, দোল ও নন্দোৎসবের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। পরবর্তী কালে রামমণি স্বপ্নে দেবী দুর্গার দর্শন পান এবং তার পর মনস্থির করেন তিনি দুর্গাপুজো করবেন। সেই থেকে শুরু বাড়ির দুর্গাপুজো।
এই বাড়ির প্রতিমার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এখানে দেবীর সিংহ অশ্বমুখী, সাধারণ ভাবে একে নলসিংহ বলা হয়। মাতৃমূর্তি সোনা ও রূপো দিয়ে সাজানো। মাতৃ-অঙ্গে ডাকের সাজ। এখানে দেবীর সন্তানদের বিগ্রহ থাকেন না। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী এই ৩ দিন মায়ের উদ্দেশে ভোগ নিবেদন করা হয়। মহাষ্টমীর দিন অন্নভোগ, পোলাও, খিচুড়ি, পরমান্ন, নানা রকম ভাজা, তরিতরকারি, চাটনি, মিষ্টি প্রভৃতি নিবেদন করা হয়। শুধুমাত্র মহাষ্টমীর দিনেই ভোগ বিতরণ করা হয়। দশমীর দিন মাতৃমূর্তির উদ্দেশে কচুর শাক ও চালতার টক-সহ পান্তা ভাতের ভোগ দেওয়া হয়।