পটুয়াটোলার বন্দ্যোপাধ্যায়দের বাড়ির পুজোর কাহিনি জানেন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মা আসছে। আকাশ, বাতাস চারিদিকজুড়ে ভেসে আসছে আগমনীর সুর। পটুয়াটোলায় রয়েছে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি। শতাব্দী প্রাচীন এই বাড়িতে প্রতি বছরই খুব মহাধুমধাম করে মায়ের আরাধনা হয়। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের অন্যতম পূর্বপুরুষ হিসেবে বেণীমাধব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত, বেণীমাধব বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রথম বাঙালি অ্যাটর্নি জেনারেল। তদানিন্তন কলকাতায় ছিল সুপ্রিম কোর্ট। ১৮৪৯ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি অ্যাটর্নির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সুপ্রিম কোর্টে ব্রিটিশদের একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান ঘটিয়েছিলেন বেণীমাধব। রানি রাসমণির পরিবার এবং সিমলার দেব পরিবারের মতো বিখ্যাত পরিবারের অ্যাটর্নি ছিলেন তিনি। তাঁর উত্তরসূরি ছিলেন বিনোদবিহারী বন্দ্যোপাধ্যায়। পটুয়াটোলার বাড়ি তৈরি করেন বিনোদবিহারী। ১৮৮৯ সালে থেকে তিনি এই বাড়িতেই পুজো শুরু করেন।
একচালার ডাকের সাজের ঠাকুর এ বাড়িতে পূজিতা হন। মাকে অলঙ্কার পরানোর পরে বাড়িতে আনা হয়। বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে শাক্তমতে পুজো হয়। একদা এই বাড়িতে ঠাকুর তৈরি হলেও, এখন আর তা হয় না। আগে এ বাড়িতে বলি প্রথার চল ছিল। পুজোর তিন দিনে চারটি বলি হত। এখন বলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মায়ের ভোগে আঁশহীন মাছ দেওয়ার রীতি রয়েছে। তবে সেই মাছ রান্নায় পেঁয়াজ দেওয়া হয় না। ঠাকুরকে যা কিছু ভোগ দেওয়া হয় সব নিরামিষ। বোধনের দিন ঠাকুরকে খুব অল্প পরিমাণে ভোগ দেওয়া হয়। সপ্তমী থেকে মহাড়ম্বরে ভোগ দেওয়া শুরু হয়। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে অন্নভোগ দেওয়ার রীতি আছে। সপ্তমীর দিন খিচুড়ি, সাদা ভাত, ঘি ভাত আর পায়েস ভোগ দেওয়া হয়। তার সঙ্গে পাঁচ রকম ভাজা, লাল শাক আর কলার বড়াও থাকে। এছাড়াও ফুলকপির তরকারি, মোচা, চাটনি, ইত্যাদি রান্না করে নিত্য ভোগ দেওয়া হয়।
প্রাচীন কাল থেকেই বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে মায়ের ভোগে বিলিতি সবজি ব্যবহার করা হয় না। আজও পুজোর সময় সেই নিয়ম মানা হয়। টম্যাটো, কাঁচা লঙ্কা, ক্যাপসিকাম সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয় ভোগের রান্না থেকে। সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী তিন দিন মিলিয়ে মোট ১২টি মালসা দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। মালসাগুলিতে সুন্দর করে খাবার সাজিয়ে দেওয়া হয়। ভোগ দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ঠাকুরকে পাঁচটা নারকেল নাড়ু আর পাঁচটা পান দেওয়া হয়। মনে করা হয়, ঠাকুর ভোগ খেয়ে উঠে মিষ্টিমুখ করে পান খাবেন। বাড়ির মহিলারাই ভোগের যাবতীয় রান্না করেন। সন্ধ্যাবেলা অন্নভোগ হয় না, সন্ধ্যায় দেবীকে লুচি মিষ্টি ভোগ দেওয়া হয়। সন্ধিপুজোর দিন ঠাকুরের সামনে এক মণ চালের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। ফল আর মিষ্টিও দেওয়া হয়। মাকে এক হাঁড়ি রাবড়ি, এক হাঁড়ি দই এবং এক হাঁড়ি মিষ্টি দেওয়া হয়। ১০৮টি পদ্ম দিয়ে চলে বিশেষ পুজো।
অষ্টমী ও নবমীর দিন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে কুমারীপুজো হয়। পরিবারের প্রধান, যিনি দুর্গা পুজোর সংকল্প করেন, তিনিই কুমারী পুজো করেন। দশমীর দিন ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। এই পরিবারে ঠাকুর বিসর্জনের পরে বেড়া অঞ্জলির নিয়ম রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা দেবীর চার দিকে ঘিরে গোল করে অঞ্জলি দেন। এরপর শুরু হয় সুবচনী সত্যনারায়ণ পুজো। বাড়ির মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি রওনা করার আগে মায়ের মঙ্গলকামনায় এই পুজো হয়। তারপর বরণ করে দেবীকে বিসর্জন দিতে নিয়ে যাওয়া হয়।