দেশ বিভাগে ফিরে যান

BJP সরকারের জন্যই কি থমকে ললিত মোদীর বিরুদ্ধে তদন্ত?

September 26, 2023 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ললিত মোদী, আইপিএল তাঁর ‘ব্রেন চাইল্ড’ অধুনা তিনি দেশত্যাগী। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দুতে ললিত। বান্ধবী হোক বা সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা, নানান ইস্যুতে প্রায়শই খবরের শিরোনামে থাকেন ললিত। এবার বর্ষীয়ান আইনজীবী হরিশ সালভের বিয়েতে গিয়েও সংবাদ শিরোনামে ললিত। গত রবিবার লন্ডনে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে তৃতীয়বারের জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন সত্তর ছুঁইছুঁই এই আইনজীবী। কিন্তু, তারচেয়েও বেশি শোরগোল পড়ে গিয়েছে তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত এক অতিথিকে নিয়ে। হরিশ সালভের বিয়ের অনুষ্ঠানে লন্ডনে উপস্থিত ছিলেন ললিত মোদী। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ললিত মোদীর উপস্থিতিতে অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছেন। আপাতত ব্রিটেনেই রয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, তিনি পলাতক নন। আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্তও করেনি।

ভারতের প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল তথা বিখ্যাত আইনজীবী হরিশ সালভে বলেন, “ললিত মোটেও পলাতক নন। বরং তাঁর বিরুদ্ধে উলটো পালটা কথা ছড়ানো হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টে ওঁর পক্ষে সওয়াল করি আমি। ওঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়েও খোলাখুলি কথা বলি। স্রেফ ভুলভাল কথা রটানো হচ্ছে।”

ললিত মোদীকে আদালত দোষী সাব্যস্ত না করলেও, ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাদের কাছে তিনি ‘ওয়ান্টেড’, ২০১০ সাল থেকেই তাঁকে খুঁজছে তদন্তকারীরা। কোটি কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিসিসিআই ২০১০-র অক্টোবরে ললিতের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করে। ২০১২-তে তদন্ত ভার নেয় ইডি। একেবারে প্রথমে ললিতকে ভারতে ফেরানোর তোড়জোড় থাকলেও, মোদী আমলে পুরো তদন্ত আটকে রয়েছে। ২০১৭-তে অক্টোবরে তামিলনাড়ু সরকার কেসটি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল কিন্তু আজ ছয় বছর কেটে গেলেও, সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি মোদীর দপ্তর। মোদীর এহেন আচরণ বলে দেয়, দেশের টাকা ও দোষী কোনওটাকেই দেশে ফেরানোর সদিচ্ছা নেই মোদীর। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে মোদী বলেছিলেন, দেশের টাকা নিয়ে যাঁরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তাঁদের প্রতিপদে মূল্য দিতে হবে।

ললিত মোদী দেশ ছেড়েছেন আজ তেরো বছর অতিক্রান্ত। ২০১০ সালের অক্টোবরে, বিসিসিআইয়ের তৎকালীন সেক্রেটারি এন. শ্রীনিবাসন তামিলনাড়ুর চেন্নাই সেন্ট্রাল ক্রাইম ব্রাঞ্চে অভিযোগ দায়ের করেন। ললিত মোদী এবং অন্য ছ’জনের বিরুদ্ধে বিসিসিআইয়ে ৭৫৩ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ করা হয়। ২০১২ সালে, ওই এফআইআরের ভিত্তিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত আরম্ভ করে।

২০১৫ সালের আগস্টে ইডি, সিবিআইয়ের মাধ্যমে ললিত মোদীর বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিশ জারি করার জন্য ইন্টারপোলকে অনুরোধ করে। আইনি পদক্ষেপের অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা এবং সাময়িকভাবে আটক করা হয় রেড কর্নার নোটিশের দ্বারা। পরের বছর নভেম্বরে পিএমএলএ আদালত ইডিকে ললিত মোদীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার অনুমতি দিয়েছিল। প্রত্যর্পণ নির্ভর করে বিদেশ মন্ত্রকের উপর। কিন্তু আরটিআইয়ের তথ্য বলছে তা করা হয়নি। সরকারের তরফে কোনও পদক্ষেপ হয়নি। ইন্টারপোল জানায়, সেই সময়ে ললিত মোদীর বিরুদ্ধে কোনও চার্জশিট ছিল না। ২০১৭-র মার্চে ললিত মোদীর বিরুদ্ধে RCN-এর জন্য ভারতের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে ইন্টারপোল।

চেন্নাই পুলিশের তদন্তে কোনও অগ্রগতি হয়নি। তদন্ত এখনও বন্ধ হয়নি, তাই আদালতে ললিত মোদীর বিরুদ্ধে অদ্যাবধি একটি চার্জশিটও দাখিল করা হয়নি। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে হলে, ইডিকে মূল অপরাধ চিহ্নিত করতে হবে। তদন্তের পরিভাষায় যাকে বলা হয় প্রিডিকেট অপরাধ। সেক্ষেত্রে চেন্নাই পুলিশের দায়ের করা এফআইআরের অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ইংল্যান্ডে করা সমস্ত প্রত্যর্পণের অনুরোধের জন্য অপরাধের চার্জশিটও বাধ্যতামূলক। ইন্টারপোল যখন প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে, সে সময় তৎকালীন ইডি ডিরেক্টর কর্নাল সিং, তামিলনাড়ু পুলিশকে একটি কড়া চিঠি পাঠান। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চেন্নাই পুলিশের সেন্ট্রাল ক্রাইম ব্রাঞ্চে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও ললিত মোদী মামলার কোনও অগ্রগতি হয়নি। তদন্ত শেষ করতে তামিলনাড়ু পুলিশের অক্ষমতা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে বিব্রত করছে।

তদন্ত আজও সিবিআইয়ের হাতে যায়নি। আরটিআই বলছে, ললিত মোদীর মামলা সিবিআইকে দেওয়ার আর্জি এখনও নাকি বিচারাধীন। বিচারের তথ্য অসম্পূর্ন হওয়ায় ইন্টারপোল বারবার প্রত্যর্পণের আর্জি খারিজ করছে।

একদিকে ভারতে বিরোধী রাজনীতিকদের উপর ইডি, সিবিআই এত তৎপর অন্যদিকে একটি তদন্ত ভার সাত বছরেও সিবিআইকে দেওয়া গেল না? এখানেই প্রশ্ন উঠছে নেপথ্য কী? ২০১১ সালের মার্চে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৭-র ধারা ১০(৩)(সি)-এর বলে, ললিত মোদীর পাসপোর্ট বাতিল করেছিল। আইন অনুসারে, সরকার ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা, ভারতের নিরাপত্তা, কোনো বিদেশি দেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা সাধারণ জনগণের স্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে পার্সপোর্ট বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিতে পারে। ২০১৪ সালের আগস্টে দিল্লি হাইকোর্ট ললিত মোদী পাসপোর্ট পুনরুদ্ধার করে জানায়, তা ভুলভাবে বাতিল করা হয়েছিল। ইডর তদন্ত খুব ধীরগতিতে চলছে এবং যথেষ্ট প্রমাণের অভাব রয়েছে। সরকার আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেনি।

২০১৫ সালে, ইংল্যান্ডের লেবার পার্টির সংসদ সদস্য কিথ ভাজ ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত সুষমা স্বরাজের নাম ব্যবহার করে অভিবাসন আধিকারিকদের উপর প্রভাব বিস্তার করে ললিত মোদীর জন্য ব্রিটিশ ভ্রমণের অনুমোদন সংক্রান্ত নথিপত্রের ব্যবস্থা করেন। যখন তার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছিল।

ললিত মোদী এবং সুষমা স্বরাজ উভয়েই এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছিলেন। ললিত মোদী বিজেপি নেতা এবং রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত। ২০০৩ থেকে ২০০৮ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বসুন্ধরার প্রাথমিক মেয়াদে, ললিত মোদী রাজস্থানে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন। তাঁকে ‘সুপার সিএম’-ও বলা হত। কর্ণাটকের কোলারে ২০১৯-র নির্বাচনী প্রচারের বক্তৃতায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ‘মোদিদের’ একজন বলেছিলেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করা হয়। এই বছর দোষী সাব্যস্ত হন রাহুল, পাশাপাশি দুই বছরের সাজা হয়। সংসদ পদ চলে যায়। যদিও পরে সুপ্রিম কোর্ট সাজা স্থগিত করে, রাহুলের লোকসভার সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। অথচ ললিত মোদীর বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ নেই!

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#CBI, #Lalit Modi, #Narendra Modi

আরো দেখুন