বাংলার দুগ্গা পুজো: এই পুজোয় নিয়মিত চণ্ডীপাঠ করতেন গণিতজ্ঞ কে সি নাগ
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে গুড়াপের জমিদার নাগ বাড়ির দুর্গাপুজো। জানা গিয়েছে, পুজোর সূচনালগ্নে নবম পুরুষ রামদেব নাগের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য। নাগ বংশের আদি পুরুষ কৃষ্ণচন্দ্র নাগ বর্ধমান মহারাজার কর্মচারী ছিলেন। সপ্তদশ শতকে গুড়াপে চলে এসেছিলেন তিনি। তাঁর সন্তান গোবিন্দরাম নাগ বর্ধমান রাজ পরিবারের কোষাধ্যক্ষ ও সেই সঙ্গে নায়েব ছিলেন। গোবিন্দরামের সন্তান রামদেব নাগ বর্ধমানের নাবালক মহারাজা তিলক চাঁদের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।
আদি পুজো মণ্ডপটি ছিল মাটির তৈরি আটচালার। কথিত আছে, জন্মাষ্টমীর পরের দিন এই বাড়িতে প্রতিমা তৈরি শুরু হয়। অষ্টমীর দিন বর্ধমান রাজ পরিবারের কামান দাগার পর সন্ধি পুজোর সূচনা হতো। দশমীর দিন হয় কুমারী পুজো। নাগ বাড়ির পুজো দেখতে এসেছিলেন বেলুড় মঠের অষ্টম প্রেসিডেন্ট বিশুদ্ধানন্দ মহারাজ। এই পুজোয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রচুর লোকজন অংশগ্রহণ করে। প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় ‘বাবুদের বোঙ্গাঁ ক কি জয়’ ধ্বনি দেন তাঁরা। বহু দূরদুরান্ত থেকে বহু মানুষের সমাগম হয় এই পুজোয়।
নাগবাড়ির এই পুজোয় নিয়মিত চণ্ডীপাঠ করতেন গণিতজ্ঞ কেশবচন্দ্র নাগ। দুর্গা মণ্ডপের বেদীতে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো করা হয় না। জনশ্রুতি, একসময় একটি মাটির হাঁড়ির নীচের অংশ ফুটো করে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। হাঁড়িতে জল ভর্তি হয়ে ডুবে যাওয়ার আগের মুহূর্তে একটি পাঁঠা চলে আসত এবং হঠাৎ হাঁড়িকাঠে মাথা গলিয়ে দিত। মায়ের জন্য স্বেচ্ছায় প্রাণীগুলি নিজেদের বলির জন্য উৎসর্গ করত। বর্তমানে অবশ্য সেই বলিপ্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।