চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে ৭ রাজ্যের বিধানসভা ভোট করাতে চাইছে মোদী সরকার, উদ্দেশ্যটা কী?
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: রাজ্য বিধানসভা ও লোকসভার ভোট একই সঙ্গে করানো যায় কি না তানিয়ে দেশ জুড়ে চর্চা। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি কমিটিও তৈরি হয়েছে। নীতি কার্যকর কী ভাবে হবে, কোন পথে সঠিক দিশা মিলতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে ইতিমধ্যেই আলোচনা সেরেছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই দিশা খুঁজে পেতে একটি কমিটিও গঠন করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে দেওয়ার ‘সুপরিকল্পিত’ ছক এই নীতি।
অন্যদিকে ইতিমধ্যেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, কোটি কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা, বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণ। নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে অভিযান শুরু করে দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা। প্রস্তুতির শেষ পর্বে জাতীয় নির্বাচন কমিশনও। চলছে ইভিএম পরীক্ষার কাজ। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ৮ অক্টোবর মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা এবং মিজোরামে বিধানসভা ভোট ঘোষণা করতে পারে কমিশন। সেক্ষেত্রে ভোট হবে দীপাবলির পর, নভেম্বরে। আর ফল ডিসেম্বর মাসের গোড়ায়। এক্ষেত্রে নতুন কোনও চমক নেই। কিন্তু জল্পনা এর পরের পর্ব নিয়ে। কারণ, আগামাী বছরের শুরুতেই লোকসভা নির্বাচন। নরেন্দ্র মোদী চাইছেন চব্বিশের লোকসভার সঙ্গে সাত রাজ্যের বিধানসভা ভোট করিয়ে নিতে। কারণ, মোদী সরকার জানে, প্রচার চালিয়ে গেলেও এত দ্রুত লোকসভার সঙ্গে সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট করানো সম্ভব নয়।
বিগত বেশ কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও লোকসভা আর বিধানসভাগুলির নির্বাচন একসঙ্গে করার কথা বলছেন। মোদী যে বছর প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, সেই ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইস্তেহারেও বিজেপি লিখেছিল যে তারা সারা দেশে একসঙ্গে ভোট করাতে চায়।
তবে ভাবনা আর বাস্তবায়ন যে এককথা নয় তা বিলক্ষণ জানে মোদী সরকার। তাই তারা এই মুহূর্তে সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে করাতে চাইছে না। কারণ, মোদী সরকার জানে, প্রচার চালিয়ে গেলেও এত দ্রুত লোকসভার সঙ্গে সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট করানো সম্ভব নয়। তার জন্য সংবিধান এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের পাশাপাশি লোকসভা ও বিধানসভার রুল অব প্রসিডিওর সংশোধন করা প্রয়োজন। তা এত তাড়াতাড়ি সম্ভব নয়। আর সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিরোধীরা চলে যাবে সুপ্রিম কোর্টে। তাতে নেতৃত্ব দেবে সদ্য বিধানসভা ভোটে জিতে আসা দলগুলি।
এমনিতেই লোকসভার সঙ্গে যদি সাত রাজ্যের নির্বাচন করানো যায়, তাহলে সেটাই হয়ে যাবে ‘এক দেশ এক নির্বাচনে’র সেমিফাইনাল। সম্প্রতি নীতি আয়োগ, নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের অন্দরের আলোচনায় কিন্তু তেমনই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মোদীও তেমনটাই চাইছেন। কারণ, বিধানসভার মেয়াদ শেষের ছ’মাস আগে ভোট করানোয় বাধা নেই। নির্বাচন কমিশনের সেই ক্ষমতা রয়েছে। এমনিতেই লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, ওড়িশা এবং সিকিমের বিধানসভা ভোট হয়ে থাকে। ২০১৯ সালেও তাই হয়েছিল। তাই এই চার রাজ্যের ক্ষেত্রে সমস্যা নেই। এবার কেন্দ্রের নজরে রয়েছে হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র। ২০২৪ সালের নভেম্বরে এই দু’টি রাজ্যের বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। দু’টিই বিজেপি-এনডিএ শাসিত রাজ্য। ফলে নরেন্দ্র মোদী চাইলেই এই দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা তাতে সায় দেবেন। এ তো গেল ছ’টি রাজ্য। সপ্তম কোন রাজ্যে বিধানসভা ভোট টার্গেট করেছে কেন্দ্র?
দেশের ইতিহাস বলছে লোকসভার ক্ষেত্রে সাতবার মেয়াদের আগে সরকার পড়ে গেছে বলে ভোট করতে হয়েছে। সব রাজ্য বিধানসভাগুলির হিসাব মেলালে দেখা যাবে – একশোরও বেশি বার রাজ্য সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ফলে মধ্যবর্তী নির্বাচন করতে হয়েছে। এখন দেখার মোদী সরকার ‘এক দেশ এক ভোট’-এর অ্যাজেন্ডাটি কি ভাবে বাস্তবায়িত করে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিরোধীরা সরব হয়েছে।