বাংলার দুগ্গা পুজো: ৩৫০ বছর প্রাচীন বারুইপুরে রায়চৌধুরী বাড়ির পুজোর ইতিকথা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: প্রায় ৩৫০ বছরের প্রাচীন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বারুইপুরে রায়চৌধুরী পরিবারের পুজো। বারুইপুরের রাসমাঠে এই পরিবারের বাড়ির দুর্গাদালানে পুরাতন রীতি মেনে পুজো চলে আসছে। দুর্গা প্রতিমার সঙ্গে থাকে জয়া ও বিজয়া। পরিবারের সদস্য সূত্রে জানা গিয়েছে, জমিদার রাজবল্লভ রায়চৌধুরী দুর্গা দালানে পুজো শুরু করেছিলেন। সেই ঐতিহ্য মেনে এখনও বোধনের দিন তিনজন ব্রাম্মণ চণ্ডীপাঠ করেন।
এই রায়চৌধুরী পরিবারের প্রতিমা বানিয়ে আসছেন কৃষ্ণনগরের পালপাড়ার মৃৎশিল্পী সন্তোষ পালের বংশধররা। এবিষয়ে শিল্পী অসীম পাল জানিয়েছেন, জমিদাররা তাদের থাকার ব্যবস্থা করেদিয়েছিলেন। সেই থেকে রাসমাঠেই থাকেন তারা। প্রতিপদ থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজো। পরিবারের অনেক সদস্য দেশের নানা প্রান্তে ও আবার কেউ কেউ বিদেশেও থাকেন। তাঁরা সবাই পুজোর সময় সমবেত হন এই বাড়িতে।
ঠাকুর বানাতে কৃষ্ণনগর থেকে নৌকা করে বারুইপুরের সদাব্রত ঘাটে এসে নেমেছিলেন মৃৎশিল্পীরা। রায়চৌধুরী পরিবারের পুজোয় দুর্গা মূর্তি বানিয়েছিলেন। তারপর থেকে বংশ পরম্পরায় কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পীরাই প্রতিমা বানিয়ে আসছেন।
জানা যায়, সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও একসময় কিছুদিন বারুইপুরের এই জমিদার বাড়িতে ছিলেন। এই বাড়িতে বসেই তিনি ‘দূর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাস লেখা শুরু করেছিলেন। যে টেবিল, চেয়ারে বসে লিখেছিলেন সেটা এখনও সংরক্ষিত আছে এই জমিদার বাড়িতে।
এই পুজো উপলক্ষে সপ্তমী থেকে নবমী ছাগ বলি হয়। নবমীর দিন আখ ও কুমড়ো বলিও হয়। দশমীতে বাড়ির মহিলারা সিঁদুরখেলেন। তারপর বিসর্জনের উদ্দেশ্যে ৪০ জন বাহক কাঁধে করে প্রতিমাকে নিয়ে যান সদাব্রত ঘাটে। রুপোর পাখা, চামর, ছাতা নিয়ে প্রতিমাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঘাটে। এই জমিদার বাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জনের দিন নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানোর রীতি প্রচলিত।