বাংলার দুগ্গা পুজো: জানেন কী প্রাচীন এই বাড়িতে দুর্গার সাথে নারায়ণের নিবিড় যোগ!
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাঙালির কাছে দুর্গাপূজা মানে আনন্দোৎসব, একটা আলাদা ঐতিহ্য। আর মাত্র কয়েক দিন পরেই বাংলার আপামর জনসাধারণ মেতে উঠবে দুর্গোৎসবে। বাংলা সাহিত্য জগতের উজ্জ্বলতম জোতিষ্ক রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের বাড়ির পুজো বনেদি বাড়ির পুজোর মধ্যে অন্যতম। এই বাড়ির পুজোয় প্রতিমার দুপাশে উপরে কার্তিক-গণেশ এবং নিচে লক্ষ্মী-সরস্বতী দেখতে পাওয়া যায়।
জনশ্রুতি, ভারতচন্দ্র বাল্যকালে নাকি এই পুজোয় অংশগ্রহণ করে অঞ্জলি দিতেন। রায়বাড়ির আরাধ্য দেবতা হলেন নারায়ণ। এবাড়ির দুর্গা প্রতিমা তৈরি হয় নারায়ণের স্নান ধোয়া জলে সিক্ত মাটি থেকে। বাড়ির ঠিক পাশেই রয়েছে রণ নদী। একসময় যে নদীর তীরে রানী ভবাশংকরীর সঙ্গে পাঠানদের যুদ্ধ হয়েছিল। সেই নদী থেকে পুরো ১০৮ ঘড়া জল এনে বাড়ির উপাস্য দেবতা নারায়ণকে স্নান করানো হয়। নারায়ণের স্নান সিক্ত মাটি থেকেই দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা হয়। প্রসঙ্গত, এই বাড়ির ঠাকুরঘরে অষ্টধাতুর জয় দুর্গা মূর্তি আছে। যিনি সারা বছরই পূজিতা হন।
ভারতচন্দ্রের বাড়ির পুজোয় লক্ষ্মী-সরস্বতী-কার্তিক-গণেশের বিরল অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ, এখানে একচালা প্রতিমা গড়ে তোলা হয় সেই এক চালাতে মা দুর্গার দুপাশে উপরের দিকে থাকেন কার্তিক এবং গণেশ। নিচে থাকেন দেবী সরস্বতী এবং লক্ষী।
হাওড়া জেলার উদয়নারায়ণপুরের পেঁড়ো গ্রামে জন্মগ্রহন করেছিলেন অন্নদামঙ্গল কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র। ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে ভারতচন্দ্র এই কাব্য রচনা করেছিলেন। ভারতচন্দ্রকে রায়গুণাকর উপাধি দিয়েছিলেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র। তাঁর পরিবারের দুর্গা পুজো কয়েকশো বছরের প্রাচীন। তবে কত পুরনো তার প্রামাণ্য ইতিহাস এখনও পাওয়া যায় নি। জানা গিয়েছে, কবি বাল্যকালে এই পুজোয় পুষ্পাঞ্জলি দিতেন।
প্রথা অনুযায়ী কৃষ্ণপক্ষে দেবীর বোধনের মাধ্যমে পুজো শুরু হয়। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পুজো চলে। এই বাড়ির পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, সপ্তমী ও অষ্টমী নবমীর সন্ধিক্ষণে ২টি করে ছাগবলি এবং নবমীর দিন ৩টি ছাগ বলি। দশমীতে মান্দারিয়া খালে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। পুজোর দিনগুলিতে পরিবারের সদস্যদের সাথে গ্রামের বহু মানুষ আনন্দে সামিল হন। পুজোর কয়েকটা দিন একসাথে করেন খাওয়া দাওয়াও।