হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ দ্য গ্লোবাল কানেক্ট’-এর মাধ্যমে কুমোরটুলির দুর্গা প্রতিমার বিশ্ব ভ্রমণ
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সেপ্টেম্বরের অনেক আগে থেকেই কুমোরটুলির রাস্তায় চোখে পড়ে চারদিকে নানা আকারের, নানা উচ্চতার দুর্গামূর্তি। কোনোটায় সাদা রঙের পোঁচ পড়েছে, কোনোটায় এখনও চলছে মাটির লেপ। ছোট ছোট গুমটিতে সাজানো শোলার অথবা থার্মোকলের নকশাকাটা। কিছু কিছু প্রতিমার গায়ে সবে দেওয়া হয়েছে মাটির শাড়ি। কুমারটুলির ঠাকুরগোলায় প্রবল ব্যস্ততা। নাওয়া খাওয়া ঘুম ছুটেছে সকলের। অবিশ্রান্ত বৃষ্টির মধ্যেও ত্রিপল প্লাস্টিক চাপা দিয়ে চলছে জোর কদমে কাজ। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এদের কোনোটা পাড়ি দেবে দক্ষিণ মধ্য অথবা উত্তর কলকাতায়। কোনটা বা আরো দূরের জেলায়। চারশো সাত, ছোটা হাতি অথবা বড়ো লরির পিঠে চেপে মা পাড়ি দেবেন কলকাতা ছাড়িয়ে দিনাজপুর, মেদিনীপুর অথবা আরো দূরে। শুধু কলকাতা বা পশ্চিমবাংলার জেলাগুলোয় নয়, পাড়ি দেবেন চেন্নাই, মুম্বাই দিল্লি সহ ভারতের প্রায় সর্বত্র। জুলাই থেকেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালির যাত্রাপথের মানচিত্রের নানা পথ এসে একটাই জায়গায় শেষ হয়। কুমারটুলি। এখন সেই তার পরিধি বেড়েছে আমেরিকা, লন্ডন, সিঙ্গাপুর হয়ে সারা বিশ্বে। অর্থাৎ বাঙালির সঙ্গে সঙ্গে মা দুর্গাও গ্লোবালাইজড হয়েছেন। কুমারটুলির দুর্গা প্রতিমার বিদেশ ভ্রমণ এখন আর চমক নয় আম বাঙালির কাছে।
যেমন বুদ্ধমূর্তির ধাঁচে একেবারে অবিকল দেখতে মা দুর্গা। উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট। তাঁর পায়ের কাছে বসে লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী। দূর থেকে দেখে বোঝা দায় এটা দুর্গামূর্তি। ফাইবারের তৈরি অভিনব এই মূর্তি কুমোরটুলি থেকে পাড়ি দিয়েছে দুবাইতে। শুধু দুবাই নয়, কলকাতা থেকে মা দুর্গা অন্তত পঁচিশ দেশে রওনা হয়েছেন এবার।
প্রতিমার পাশাপাশি পুজোর উপকরণও গিয়েছে লক্ষ মাইল দূরে। গঙ্গাজল থেকে নৈবেদ্য সবকিছুই। এককথায় মা দুর্গা এখন আর এই রাজ্য বা দেশের গণ্ডির মধ্যে আটকে নেই। হয়ে উঠেছে বিশ্বজনীন। কুমোরটুলির শিল্পীদের কথায়, প্রবাসে থাকা বাঙালিদের মধ্যে দুর্গাপুজো করার প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। তাই প্রতি বছর অর্ডারও আসছে ভালোই। কুমারটুলির একজন শিল্পীই বিভিন্ন দেশে এবার ৩৭টা দুর্গা প্রতিমা পাঠিয়েছেন। আগে বিদেশে পাঠানো ঠাকুর তৈরি হত শোলার অথবা পাপ্লে-র(কাগজের মণ্ড)। এখন শুধু শোলা অথবা ফাইবার গ্লাসের ঠাকুর তৈরি হয়।
জার্মানি, ইতালি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, দুবাই, সুইডেন, লন্ডন, সুইজারল্যান্ড, আয়্যারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, আমেরিকা, ব্রাজিল, নাইজেরিয়ার মতো প্রায় পঁচিশটি দেশে এবার ঠাকুর পাঠিয়েছে কুমোরটুলি। বেশিরভাগই পৌঁছে গিয়েছে। কিছু এখনও জাহাজে যাচ্ছে। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, প্রবাসে বাঙালিরা প্রতিবছর প্রতিমা নেন না। তিন-চার বছর অন্তর নেন। দিনে দিনে বিভিন্ন দেশেই দুর্গাপুজোর সংখ্যা বাড়ছে। এমনকী এই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে প্রবাসের বাঙালিরা খুলেছে ‘দ্য গ্লোবাল কানেক্ট’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। সেখানে প্রায় ৪০টি দেশের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। বিভিন্ন দেশের পুজোর ছবি, সেখানকার রীতিনীতি ইত্যাদি নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়।