শিশুদের মধ্যে হু হু করে বাড়ছে হ্যান্ড-ফুট-মাউথ রোগ, কোন কোন লক্ষণ দেখে সতর্ক হবেন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: স্কুল থেকে ফিরেই ছেলের মুখ শুকনো, গা গরম। সঙ্গে না খাওয়ার বায়না। এমন মরসুমি অসুখ তো শিশুদের হামেশাই লেগে থাকে। তাই প্রথম দিকে সুদেষ্ণাও শ্রীয়ানের জ্বর নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন হননি। চিন্তা বাড়ল যখন জ্বরের মাত্রা ১০৩ ছাড়াল, সঙ্গে মুখে, হাতে, পায়ে ফোস্কা বেরোল, আর যন্ত্রণায় সাড়ে চার বছরের ছেলেটা ছটফট করতে লাগল। বন্ধ হল খাওয়াদাওয়াও। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর সুদেষ্ণা জানতে পারলেন, শ্রীয়ান ‘হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ’ ডিজিজে আক্রান্ত।
বাড়ছে ‘হ্যান্ড–ফুট–মাউথ’ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। ভাইরাসঘটিত এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে দুই বঙ্গের শিশুরা। এই নিয়ে আতঙ্কিত অভিভাবকরা। যদিও চিকিৎসকরা জানান, এই নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। সেই সঙ্গে কিছু সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে, চিকিৎসকরা জানান, এখন দিনে গড়ে ৮ থেকে ১০টি শিশু হ্যান্ড–ফুট–মাউথে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য আসছে। গত দু-তিন বছর আগেও এই রোগ এতটা ছিল না বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা।
চিকিৎসকদের মতে, ভারতে বিভিন্ন রাজ্যেই দুই থেকে আট বছরের শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এই রোগ আটকানোর কোনও উপায় নেই, কোনও টিকাও নেই। রোগটি বেশ ছোঁয়াচে ধরনের। স্কুলে যদি শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ শুরু হয়, তবে আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শে আসা অন্য শিশুদের মধ্যে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এই অসুখে সাধারণত মুখ, পায়ের পাতা, হাঁটুর উপরে, হাতের তালুতে ফোস্কার মতো র্যা শ বেরোয়। অনেক অভিভাবকই শিশুদের মধ্যে এই উপসর্গগুলি দেখে চিকেন পক্সের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। মুখের ভিতরে ফোস্কার মতো র্যাগশ বেরোনোর কারণে শিশুদের গলায় বেশ ব্যথা থাকে। ফলে তাদের খাবার গিলতে সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসকের মতে, এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলি সাধারণ ভাইরাল জ্বরের মতোই। প্রথম দিকে তীব্র জ্বর, খাওয়াদাওয়ার ইচ্ছা কমে যাওয়া, সারা গায়ে ব্যথা হতে শুরু হয়। গায়ে র্যা শ বেরোতে শুরু করলেই সচেতন হতে হবে।
হাত, পা, মুখের ভিতর ফুসকুড়ি বা ঘায়ের মতো উপসর্গ সবার ক্ষেত্রে আবার না-ও দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে মুখের ভিতর আলসারের লক্ষণ দেখা যেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির লালা, থুতু, হাঁচি-কাশি, শ্লেষ্মার সংস্পর্শে এলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
এই রোগ প্রতিরোধে কী কী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি?
এই রোগে আক্রান্ত হলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়ার কোনও কারণ নেই। চিকিৎসকদের মতে, সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাই বেশি। সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি।
১) শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশি। বড়দের এই রোগের ঝুঁকি কম। ফলে সন্তানকে সুস্থ করে তোলার দায়িত্বে থাকেন বাবা-মায়েরা। তবু চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্তের সংস্পর্শে যত কম আসা যায়, ততই ভাল। বাড়িতে অন্য শিশু থাকলে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। রোগীর দেখভালের সময় মাস্ক এবং গ্লাভস ব্যবহার করা প্রয়োজন।
২) রোগীর ব্যবহার করা থালা, গ্লাস, বাটি-চামচ পরিষ্কার করার সময় গ্লাভস ব্যবহার করা জরুরি।
৩) রোগীর দেখাশোনার পর সাবান অথবা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ভাল করে হাত ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
৪) এই রোগে আক্রান্ত হলে সাত থেকে ১৪ দিন সারতে সময় লাগে। এই সময় শিশুদের স্কুলে না পাঠানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এই রোগের কোনও ওষুধ বা টিকা নেই। হ্যান্ড–ফুট–মাউথে আক্রান্তদের জ্বর হলে সাধারণ জ্বরের ওষুধ দিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিহিস্টামিন দিতে হবে। প্যারাসিটামল দেওয়ার সঙ্গে মুখের ব্যথা সারাতে মাউথওয়াশ, লোকাল অ্যানাস্থেটিক জেলি লাগানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।