রেল লাইন রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি রয়েছে, আগেই সতর্ক করেছিল ক্যাগ
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দেশের রেলওয়ে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ নতুন করে সামনে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ উঠছে রেললাইনের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে বা দুর্ঘটনার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব-মধ্য রেলওয়ে জোনের আওতায় লাইনচ্যুত হয়েছিল সীমাঞ্চল এক্সপ্রেস। রিপোর্টে এ ব্যাপারে ক্যাগ জানিয়েছিল যে, বিগত চার মাস ট্র্যাক ইনস্পেকশনই করা হয়নি। তবে শুধুমাত্রই পূর্ব-মধ্য রেল নয়। সবক’টি রেলওয়ে জোনেই ট্র্যাক ইনস্পেকশনের ক্ষেত্রে রয়েছে ‘শর্টফল’। অর্থাৎ, রেললাইনের রক্ষণাবেক্ষণ ইস্যুতে বহু কাজ বকেয়া রয়েছে। যার ফলে আবারও গুরুতর প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে রেলের যাত্রী সুরক্ষা। প্রশ্ন উঠছে রেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও।
ট্রেনের গতির উপর বিভিন্ন ব্রড গেজ ট্র্যাকের শ্রেণিবিন্যাস (ক্ল্যাসিফিকেশন) করে রেলমন্ত্রক। ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি ধারণ করতে সক্ষম রেললাইনকে গ্রুপ-এ, ঘণ্টায় ১৩০ কিমি পর্যন্ত রেলওয়ে ট্র্যাককে গ্রুপ-বি’তে রাখা হয়। কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাইয়ের সাবার্বান রেললাইনকে গ্রুপ-সি ক্যাটিগরিতে রাখা হয়। ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত ও বছরে ২০ জিএমটি (গ্রস মিলিয়ন টন) কিংবা তার বেশি পরিমাণের ‘ট্রাফিক ডেনসিটি’কে ডি-স্পেশাল এবং বছরে ২০ জিএমটির কম ক্ষেত্রে ডি গ্রুপে রাখা হয়। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ট্রেন চলাচলকারী বাকি সমস্ত রেললাইন থাকে ই-স্পেশাল এবং ই গ্রুপে। কোন গ্রুপের রেলওয়ে ট্র্যাক কতবার ইনস্পেকশন করা হবে, তারও মাপকাঠি রয়েছে রেলের। ঘণ্টায় ১৩০ কিমির উপরে উঠলেই দু’মাসে একবার, ১১০ থেকে ১৩০ কিমি প্রতি ঘণ্টার ক্ষেত্রে প্রতি তিন মাসে একবার, গ্রুপ-সি, ডি এবং ডি-স্পেশালের ক্ষেত্রে ছ’মাসে একবার এবং ই-স্পেশাল ও ই-গ্রুপের ক্ষেত্রে বছরে একবার ট্র্যাক ইনস্পেকশন করতেই হয়।
২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ২০২২ সালে ক্যাগ সংসদে যে রিপোর্ট দিয়েছিল, তাতে দেখা যাচ্ছে যে পূর্ব-মধ্য রেলের গ্রুপ-বি ট্র্যাকের ৪০টির মধ্যে ১২টি ক্ষেত্রেই ইনস্পেকশন বকেয়া রয়েছে। অর্থাৎ, প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে কাজই হয়নি। সবক’টি জোন মিলিয়ে ৩৫০টি ইনস্পেকশন হওয়ার কথা ছিল ওই সময়সীমার মধ্যে। অথচ বকেয়া রয়েছে ১৮১টি। এই ইনস্পেকশন বলতে ‘ট্র্যাক রেকর্ডিং কার’ (টিআরসি) দিয়ে রেললাইনে নজরদারি চালানোর কথাই বলা হয়েছে।
দেশের রেলওয়ে সেফটি রিপোর্ট ২০১৯-২০-এ দেখা গিয়েছে যে, রেল দুর্ঘটনার ৭০ শতাংশ ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়া কারণে ঘটেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬৮ শতাংশ বেশি। এর পরের দুইটি কারণ হচ্ছে, ট্রেনের অগ্নিকাণ্ড এবং সংঘর্ষ, যা যথাক্রমে মোট দুর্ঘটনার ১৪ শতাংশ এবং আট শতাংশ।
প্রতিবেদনে ৪০টি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে – এরমধ্যে ৩৩টি যাত্রীবাহী ট্রেন এবং সাতটি মালবাহী ট্রেন। এর মধ্যে ১৭টি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে রেললাইনে ত্রুটি থাকার কারণে – যার মধ্যে ফাটল এবং রেললাইনের সংকোচন-প্রশমন দুটি বড় কারণ।
ধাতুতে তৈরি রেললাইনগুলো গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রসারিত হয় এবং শীতকালে তাপমাত্রার ওঠানামার কারণে সংকোচনের মধ্য দিয়ে যায়। এজন্য এই রেললাইনগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।
ঢিলে হয়ে থাকা লাইনগুলোকে টাইট দেয়া, নিয়মিত স্লিপার পরিবর্তন করা এবং অ্যাডজাস্টিং সুইচগুলোকে লুব্রিকেন্ট দিয়ে পিচ্ছিল রাখা জরুরী এজন্য। এ ধরনের রেললাইন সাধারণত পায়ে হেঁটে অথবা ট্রলি, লোকোমোটিভ এবং রিয়ার ভেহিকলে চড়ে পরীক্ষা করা হয়। এই নিয়মিত পরীক্ষায় ত্রুটি থেকে যাচ্ছে। যার ফলে প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা।