খড়দহের এই বাড়ির পুজোয় সাদা থানে নবপত্রিকা, নেই লক্ষ্মী-সরস্বতী, কেন জানেন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ঊনবিংশ শতকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে পাশ হয় বিধবা বিবাহ আইন। বাংলার সমাজে সেই ধারা আজও টিকে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার শ্রীপাট খড়দহে। নবপত্রিকাকে পরানো হয় সাদা থান। প্রভু নিত্যানন্দ ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দে প্রচলন করেছিলেন এই দুর্গা পুজোর। সেই পুরনো প্রথা অনুসারে এখানে দেবী উমা রূপে বিরাজমান। পরিবারের সদস্যদের দাবি, প্রায় ৫০০ বছর আগে বিধবা বিবাহের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন নিত্যানন্দ। সে কারণে তিনি সাদা থানেই সাজিয়েছিলেন নবপত্রিকাকে। সেই থানের উপর এঁকেছিলেন সিঁদুরের রেখা।
এই পুজোর ভোগে দেওয়া হয়, যুগল (খিচুড়ি), চচ্চড়ি, অন্ন (ভাত), শুক্তো, মুগঘণ্ট, মোচার ঘণ্ট, পোস্ত, ডাল, পুষ্পান্ন (ঘি ভাত), ধোকার আর ছানার ডালনা, চাটনি, পরমান্ন (পায়েস) ও মিষ্টিসহ ১৪ রকম পদ। নিত্যানন্দ বিশ্বাস করতেন, কাত্যায়নী রূপে মা দুর্গাকে পুজো করলে গৌরকে পাওয়া সম্ভব। তাই তিনি শাক্ত পরিবারে জন্মেও অচণ্ডালের মধ্যে বিতরণ করেছিলেন বৈষ্ণব ধর্ম। এখানে একচালায় দুর্গার সাথে কার্তিক ও গণেশ থাকলেও থাকে না লক্ষ্মী ও সরস্বতী। বদলে থাকে দুর্গার দুই সখী জয়া ও বিজয়া। এখানে সিংহের মুখ ঘোড়ার মতো। কথিত আছে, বৃন্দাবনে শিশু কৃষ্ণকে বধের জন্য কংস কেশাসুরকে পাঠালে সে ঘোড়ার মুখ ধারণ করে।
সপ্তমীতে নবপত্রিকাকে পরানো হয় সাদা থান। এর নেপথ্যে রয়েছে একটি কাহিনী। জনশ্রুতি নিত্যানন্দ দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছেন শুনে এলাকার সবাই যে যাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী উপহার এনেছিলেন। এক বৃদ্ধা আনেন সাদা থান। তা দেখে অবাক হয়ে যান সবাই। কিন্তু ভক্তের আনা উপহার নিত্যানন্দ ফেরত না দিয়ে ওই থানই নবপত্রিকাকে পরান। মন্ত্রের সাহায্যে এই পুজোয় বলি দেওয়া হয় মাসকলাই। কৃষ্ণা নবমী থেকে শুক্লা নবমী পর্যন্ত চণ্ডীপুজো চলে। দশমীতে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন মহিলারা।