এখানে দুর্গাপুজোয় নবপত্রিকাকে স্নান করানো হয় বিভিন্ন দেশের নদীর জল দিয়ে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: পৃথিবীর বিভিন্ন নদীর জল দিয়ে এখানে স্নান করানো হয় নবপত্রিকাকে। প্রথমে গঙ্গাজল, তারপরেই থাকে টেমস নদীর জল, এছাড়াও জল আনা হয় মিশরের নীল নদ ও চীনের হোয়াংপু থেকে। সব জল একটি পাত্রে মিশিয়ে স্নান করানো হয় নবপত্রিকাকে।
দুর্গা পুজোয় তাদের পারিবারিক এই রীতি আজো পালন করে চলেছে বালির বন্দ্যোপাধ্যায়রা। সময়টা বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশক। বালিতে পেল্লাই বাড়ি বানালেন জগৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্রিটিশ যুগের ডাকাবুকো আইনজীবী তিনি। ঘোড়ার গাড়ি চেপে রোজ মামলা লড়তে যেতেন ফোর্ট উইলিয়াম কোর্টে। দ্বারভাঙা থেকে পুরীর মহারাজা, শতাধিক জমিদার, কে ছিলেন না তাঁর ‘ক্লায়েন্ট’।
জগৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে শুরু হওয়া সেই পুজোর বয়স এখন ১৫৭ বছরের উপর। স্বভাবে রাশভারী এবং পেশায় দুঁদে আইনজীবী ছিলেন তিনি। তাই নিয়মকানুনে ত্রুটি বা বিচ্যুতি কখনই বরদাস্ত করতেন না। নিষ্ঠার সঙ্গেই উমাকে মেয়ে রূপে ঘরে তোলেন তিনি। কেবল প্রথা ভাঙলেন নবপত্রিকা স্নানে। বাড়ির কাছ দিয়ে গঙ্গা বয়ে গেলেও তিনি ঠিক করলেন, স্নান হবে বাড়িতেই। তাও শুধু গঙ্গার জলে নয়, দেশ-বিদেশ মিলিয়ে মোট সাত নদীর জল চাই। ব্যাস, সেই যে শুরু হল, তারপর থেকে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো ওই নিয়মকেই ধরে রেখেছে। বিশ্বের সাতটি নদীর জল দিয়ে ঠাকুরদালানেই স্নান করানো হয় নবপত্রিকাকে।
এই পরিবারের বংশধর অশোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবমাল্য বন্দ্যোপাধ্যায় এখন এই পুজোর উদ্যোক্তা। দু’জনেই সত্তরোর্ধ্ব। তবে এখনও নিয়মিত হাইকোর্টে যান অশোকবাবু। তিনিও নামী আইনজীবী। তাঁর কথায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জল সংগ্রহ করে আনা হয়। আমি নিজেও বিভিন্ন দেশে গেলে জল নিয়ে আসি। পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। তাই পশু বলির বদলে কুমড়ো, শশা, আখ বলি দেওয়া হয়। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত বাড়িতেই খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়। যে কেউ অংশ নিতে পারেন তাতে। জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। দশমীর দিন বিসর্জন হয় বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির প্রতিমা।