বাংলার দুগ্গা পুজো: শৈলশহরের প্রথম পুজোয় আজও মিশে আছে বাঙালিয়ানার স্বাদ
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ১০৯ বছরের প্রাচীন দার্জিলিংয়ের চাঁদমারিতে জেএন মিত্র রোডে পুজো। এই পুজোর নেপথ্যে রয়েছে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া। সেইসময় এই পুজো ছিল জাতপাতের বিরুদ্ধে বিশেষ বার্তা। গান্ধীজির স্বদেশি আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে পুজো উদ্যোক্তারা স্থির করলেন, হরিজনরা মায়ের পুজোর ভোগ রান্না এবং পরিবেশনও করবেন। সেই থেকে নয়া ইতিহাস রচনা হল দার্জিলিংয়ের নৃপেন্দ্র নারায়ণ বাঙালি হিন্দু হলের পুজো। প্রতিপদে দুর্গা মণ্ডপে নিয়ে আসা হয়। পুজো উপলক্ষে সেইসময় দার্জিলিংয়ের বাঙালি পরিবারের ছেলেমেয়েরা হকি টুর্নামেন্ট, ব্যাডমিন্টন খেলতো। নাটক, যাত্রাও হতো। এছাড়াও জমতো জমাটি গানের আসর।
পুরনো রীতি অনুযায়ী সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে বসিয়ে অন্নভোগ খাওয়ানো হয়। নবমীতে হয় কুমারী পুজো। এখন ৩দিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। আগে দার্জিলিংয়ের কাকঝোরায় প্রতিমা বিসর্জন হতো। এখন প্রতিমা নিরঞ্জন হয় সোনাদার কাছে রংবুলের বাংলাখোলায়। দশমীতে সিঁদুর খেলা। শৈলশহরের এই প্রথম পুজোয় বাঙালি, নেপালি, তিব্বতি ভুটিয়া প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষ একে অপরকে মিষ্টিমুখ করায়, আলিঙ্গনের মধ্যে দিয়ে সম্প্রীতির বার্তা দেয়।
জানা গিয়েছে, দার্জিলিংয়ের নৃপেন্দ্র নারায়ণ হলে এসেছিলেন মহাত্মা গান্ধী, নজরুল, ভগিনী নিবেদিতা থেকে শুরু করে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মতো ব্যক্তি। সস্ত্রীক বর্ধমানের মহারাজাও এখানে আসতেন পুজো দেখতে। অষ্টমীতে দেবীকে বরণ করে সোনার গয়নায় সাজিয়ে দিতেন মহারানি রাধারানী। মোহর দিতেন বলেও শোনা যায়।
শৈলশহরের কীভাবে প্রচলন হয় দুর্গাপুজোর?*
শৈলশহরে দুর্গাপুজোর প্রচলনের নেপথ্যে রয়েছে এক কাহিনী। বিশ শতকের গোড়ার কথা। দার্জিলিংয়ে তখন প্রায় ৪০০ ঘর বাঙালি। নিজেদের একতা বজায় রাখতে গড়ে তুলেছিল বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন। এরজন্য কোচবিহারের মহারাজা দান করেছিলেন জমি। তৈরি করা হয়েছিল নৃপেন্দ্র নারায়ণ হল। যা সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি বাড়ি ছিল। কিছুদিন পরে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে সেই বাড়ি পুড়ে গেল। এরপর বর্ধমানের রাজা বিজয়চাঁদ মহতাবের আর্থিক সহযোগিতায় তৈরি হল পাকা ভবন। দার্জিলিংয়ের বাঙালিরা স্থির করলেন, এই আনন্দ চিরস্থায়ী করতে দুর্গাপুজো করবেন। ১৯১৪ সালে কলকাতার কুমোরটুলি থেকে দার্জিলিং মেলে চেপে দুর্গা নিয়ে আসা হলো শিলিগুড়ি। তারপর পাকদণ্ডী বেয়ে টয়ট্রেনে দার্জিলিংয়ে। যশোর থেকে নিয়ে আসা হল ঢাকিদের।