নবপত্রিকা স্নানে সূচনা হয় সপ্তমীর, গণেশের পাশে এই কলাবউ আসলে কে?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সপ্তমীর সকালে হয় নবপত্রিকা স্নান। এটি দুর্গা পুজোর একটি আবশ্যিক আচার। নবপত্রিকার আক্ষরিক অর্থ ৯টি পাতা। আসলে অবশ্য ৯টি পাতার সঙ্গে সঙ্গে থাকে শিকড়ও। এগুলি হল কলা, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, দাড়িম, অশোক, মান ও ধান। একটি কলাগাছের সঙ্গে অপর ৮টি উদ্ভিদের শিকড় ও পাতা বেঁধে দেওয়া হয়। অপরাজিতা লতা দিয়ে এই বাঁধুনির কাজ করা হয়। তার পর লাল পাড় সাদা শাড়ির আচ্ছাদনে ঘোমটাপরা বধূর আকার দেওয়া হয়। সিঁদুর পরানো হয়। নবপত্রিকার প্রচলিত নাম হল ‘কলাবউ’। মনে করা হয়, গণেশের বউ কলা বউ, কিন্তু আসলে তিনি গণেশের বউ নন। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী কলা বউ দুর্গার পরিবারের একজন।
পৌরাণিক ইতিহাস বলে, গণেশের দুই স্ত্রী। তারা হলেন রিদ্ধি ও সিদ্ধি। দেবতাদের স্ত্রীরা সবসময় দেবতাদের বাম দিকে অবস্থান করতেন। কিন্তু কলা বউ গণেশের ডান দিকে অবস্থান করেন। মহাসপ্তমীর দিন সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় কলাবউ স্নান।সপ্তমীর দিন সকালে কাছের কোনও নদী বা কোনও জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরোহিত নিজেই কাঁধে করে নবপত্রিকা নিয়ে যান। তাঁর পিছন পিছন ঢাকীরা ঢাক বাজাতে বাজাতে এবং মহিলারা শঙ্খ ও উলুধ্বনি করতে করতে যান। স্নানের পর তাকে মা দুর্গার পাশে প্রতিষ্ঠা করা হয়, তারপর শুরু হয় মূল পুজো। পূজামণ্ডপে নিয়ে এসে নবপত্রিকাকে দেবীর ডান দিকে একটি কাষ্ঠসিংহাসনে স্থাপন করা হয়। পুজোমণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপুজোর মূল অনুষ্ঠানটির প্রথাগত সূচনা হয়।
মা দুর্গার ৯ রূপের অন্যতম এক প্রতীক হল নবপত্রিকা, অর্থাৎ গাছের নয়টি পাতা। এই নয় গাছ দেবীর নয় রূপকে বোঝায়, সেগুলো হল-ব্রহ্মাণী, কালিকা, উমা, কার্তিকী, শিবা, রক্তদন্তিকা, শোকরহিতা, চামুন্ডা ও লক্ষ্মী। তবে এই নয় দেবীর মধ্যে একমাত্র দেবী চামুণ্ডা ছাড়া অন্য কোনও দেবীর পুজো হয়না। শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী কলাবউ আসলে দেবী দুর্গার অন্য একটি রূপ, সেই কারণেই কলাগাছকে মন্ডপের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়। কলাবউ আসলে নবপত্রিকা যা দেবী দুর্গার বৃক্ষ রূপ।