দুর্গা পুজোয় বাংলার ব্যবসা ৬০ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মর্ত থেকে বিদায় নিয়েছে মা। সকলেরই মন ভার ঠিকই তবে ওই একটাই সান্ত্বনা, আসছে বছর আবার হবে। গোটা বছর ধরে পুজোর চার-পাঁচটা দিনের অপেক্ষায় থাকে বাঙালি। সমস্ত দুঃখ-কষ্ট ঝেড়ে ফেলে হই হই করে কাটান সকলে। খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, ঘুরু-ঘুরু সবটাই চুটিয়ে হয়। আসলে শারদোৎসব মানেই মিলনোৎসব।
এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ‘ফুলেফেঁপে’ উঠেছে বাংলার অর্থনীতি। এই উৎসব এমন ভাবে প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে যে, তার অর্থনীতির বহর কিংবা বৃদ্ধির হার হিসাব করা কঠিন। এই বছর শারদীয় উৎসবে এবারও বিপুল ব্যবসা পশ্চিমবঙ্গে। ব্যবসার মোট অঙ্ক ৬০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে অনুমান।
অর্থীনীতিবিদরা বলছেন, বাংলায় লক্ষ্মীলাভের বড় দরজাও কিন্তু খুলে যায় এই দুর্গাপুজোতেই। কর্পোরেট হাউস তো বটেই, অন্যান্য মাঝারি বা ছোটখাটো দেশীয় সংস্থা মিলিয়ে রাজ্যে পুজোর পিছনে বিনিয়োগ অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা।
অতিমারীর আগে ব্রিটিশ কাউন্সিল পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুজো নিয়ে সমীক্ষায় দেখিয়েছিল, ২০১৯ সালে ৩২ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে উৎসব ঘিরে, যা রাজ্যের জিডিপি-র প্রায় ২.৬ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে, উৎসবের সময় মানুষের টাকা খরচ করার প্রবণতা বাড়ে। অর্থনীতিতে টাকার এই সঞ্চালনের ফলে ব্যবসাতেও গতি আসে।
করোনার জেরে সার্বিক মন্দা দেখা দিলেও গত বছর থেকে ফের উৎসবের অর্থনীতি রাজ্যের মানুষের অন্যতম অবলম্বন হয়ে উঠেছে। ২০২২ সালে পুজো ঘিরে ৪৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এই ব্যবসা এবার ৬০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে।
ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু এ সম্পর্কে বলেন, ‘নির্দিষ্ট অঙ্ক বলা খুবই মুশকিল। তবে ৬০ হাজার কোটি টাকার উপরে ব্যবসা হয়েছে বলেই আমার ধারণা।’ এই টাকার একটা বড় অংশ পেয়ে থাকেন শিল্পী ও তার সহযোগী কর্মীরা। শাশ্বত বলেন, ‘পুজোর যা বাজেট থাকে তার ৭০ শতাংশ টাকা প্রতিমা, মণ্ডপ, আলোকসজ্জা, ঢাকি, পুরোহিতের জন্য খরচ করা হয়। এ সবের সঙ্গে জড়িত কর্মীরাই এই টাকা পান।’ সরাসরি পুজো কমিটির মাধ্যমে যাঁরা টাকা পান, তাঁদের বাইরেও একটা বড় অংশ থাকে, যেগুলি উৎসবের অনুসারী হিসেবে পুজোয় লাভবান হয়।
গত বছরের তুলনায় এবছর বিক্রিবাটা ৩০-৪০ শতাংশ বেড়েছে বলেই জানাচ্ছেন খুচরো বিক্রেতা এবং হোটেল ব্যবসায়ীরা। কলকাতার একটি নামী হোটেলের ম্যানেজারের কথায়, ‘‘পুজোর সময় এ বছর প্রায় ১০০ শতাংশ ঘরই ভর্তি ছিল আমাদের। রেস্তরাঁগুলিতেও ভীষণ ভি়ড় ছিল।’’ দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলছেন, ‘‘খাবারের দোকানে প্রচুর বিক্রি হয়েছে এ বার। অন্তত ৪০ শতাংশ বেশি এবং এটা চলতে থাকবে দীপাবলি পর্যন্ত।’’