উত্তরবঙ্গে পুরুষ গন্ডারের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তায় বনকর্তারা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: উত্তরবঙ্গে গন্ডারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও মহিলা-পুরুষ গন্ডারের তারতম্য চিন্তায় ফেলেছে বনকর্তাদের থেকে পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলিকে।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গোরুমারার ৮৯ বর্গ কিমি এলাকায় ২০২২ সালের শুমারি অনুযায়ী গণ্ডারের সংখ্যা ৫৫টি। এরমধ্যে পুরুষ গণ্ডার ২৪টি এবং স্ত্রী গণ্ডার ২১টি। ১০টি গণ্ডারের লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে, ২১৬ বর্গ কিমি বিস্তীর্ণ জলদাপাড়ায় ২০২২ সালের শুমারি অনুযায়ী গণ্ডারের সংখ্যা ২৯২টি। চলতি বছর সেই সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে মনে করে বনদপ্তর। ২০১৯ সালের শুমারি অনুযায়ী, জলদাপাড়ায় ২৩৭টি গণ্ডারের মধ্যে পুরুষ গণ্ডার ৯৮টি, স্ত্রী গণ্ডার ৯৪টি এবং ৪৫টি গণ্ডারের লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
২০১৯ সালের শুমারি অনুযায়ী, গোরুমারায় ৫২টি গণ্ডারের মধ্যে ২৫টি পুরুষ গণ্ডার, ১৭টি স্ত্রী গণ্ডার এবং ১০টি গণ্ডারের লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ত্রী গণ্ডারের সংখ্যা কমে গেলে পুরুষ গণ্ডারের মধ্যে সঙ্গিনী দখলের লড়াই শুরু হয়। লড়াই এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, গণ্ডারের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
২০১৭ সালে ধূপঝোরা-১ বি কম্পার্টমেন্টে সঙ্গিনী দখলের লাড়াইয়ে দু’টি গণ্ডারের সংঘর্ষে পুরুষ গণ্ডারের মৃত্যু হয়। গণ্ডার বিশেষজ্ঞদের দাবি, দু’টি পুরুষ গণ্ডারের মধ্যে সংঘর্ষে কেউ না পেরে উঠলে তাকে আত্মসমর্পণ করতে হয় এবং এলাকা ছেড়ে দিতে হয়। আর সেই গণ্ডারকেই বলে বিবাগী গণ্ডার।
রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান তথা গণ্ডার বিশেষজ্ঞ অমল ভট্টাচার্য বলেন, জঙ্গলে পুরুষ গণ্ডারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকবে এবং গণ্ডার বিবাগী হয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়তে পারে। তবে এই সমস্যা মেটাতে ইন্টারন্যাশনাল রাইনো ফাউন্ডেশন ফর এশিয়ান রাইনোর শীর্ষ পরামর্শদাতা তথা গণ্ডার বিশেষজ্ঞ বিভাব তালুকদার অসম ও বাংলার মধ্যে গণ্ডার আদান-প্রদানের পরামর্শ দিয়েছেন।
এমনিতেই স্ত্রী গন্ডারের দখল নিয়ে জলদাপাড়া এবং গোরুমারায় পুরুষদের মধ্যে লড়াই লেগেই রয়েছে। কয়েক বছর আগে গোরুমারায় স্ত্রী গন্ডারের দখল নিয়ে দুটি পুরুষ গন্ডারের মধ্যে বেদম লড়াই হয়। সেই লড়াইয়ে একটির প্রাণ যায়। কয়েক বছর আগে সঙ্গিনী দখলের লড়াইয়ে হেরে গিয়ে গোরুমারা ছেড়ে চলে আসে দুটি পুরুষ গন্ডার। তার মধ্যে একটি মহানন্দা অভয়ারণ্যে চোরাশিকারিদের হাতে মারা পড়ে। অন্যটিকে শিলিগুড়ির কাছে মুক্ত চিড়িয়াখানা বেঙ্গল সাফারিতে রাখা হয়েছে।