জয়নগরের মজিলপুরের ধন্বন্তরী কালী’র প্রসিদ্ধি এখন সারা বাংলা জুড়ে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আদিগঙ্গা বা ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী স্থানগুলি ছিল গভীর জঙ্গলে ভরা এবং নিরিবিলি। তন্ত্রসাধকরা এই সমস্ত স্থান গুলিতেই গড়ে তুলছিলেন শক্তিসাধনার ক্ষেত্র। লোকালয় থেকে বেশ খানিকটা দূরে। এরকমই একটি সাধন ক্ষেত্র হল, দক্ষিণ ২৪ পরগণার মজিলপুরের ধন্বন্তরী কালী মন্দির। যাঁর প্রসিদ্ধি এখন সারা বাংলা জুড়ে।
১২ ভুঁইঞার এক ভুঁইঞা ছিলেন প্রতাপাদিত্যকে বন্দি করেছিলেন দিল্লির সম্রাট। বন্দি অবস্থাতেই রাজার মৃত্যু। প্রতাপাদিত্যর বন্ধু ছিলেন শংকর চক্রবর্তী নামে এক ব্রাহ্মণ। রাজার মৃত্যুর পর শংকর তাঁর বংশকে রক্ষা করতে সবাইকে দক্ষিণ যশোহরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আজকে যেখানে জয়নগর সেই অঞ্চল ছিল দক্ষিণ যশোহরের মধ্যে। গোটা এলাকাজুড়ে জঙ্গল। বাঘ সহ অন্যান্য হিংস্র জন্তুতে পরিপূর্ণ। জনশ্রুতি, সেখানে তান্ত্রিক ভৈরবানন্দ কঠোর তপস্যা করছিলেন। বর্তমানে যেখানে মন্দির সেখানে ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। চক্রবর্তী বংশের পূর্বপুরুষ রাজন্যনাথ চক্রবর্তী সাধক ভৈরবানন্দের সন্ধান পেয়ে নেতড়া এলাকা থেকে চলে এসেছিলেন এই অঞ্চলে। দু’জনের সাক্ষাৎ হয়। ভৈরবানন্দ তাঁকে বলেন, ‘আমি স্বপ্নাদেশ পেয়ে জেনেছি আদি গঙ্গায় মা রয়েছে।’ তারপর আদি গঙ্গা থেকে কালী ঠাকুরের কষ্টি পাথরে তৈরি মূর্তি তুলে নিয়ে এসে পর্ণকুটিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ভৈরবানন্দ রাজন্যনাথকে পুজোর দায়িত্ব দিয়ে অন্যত্র চলে যান। তারপর থেকে বংশ পরম্পরায় চক্রবর্তী পরিবার জয়নগরের ধন্বন্তরি কালী মন্দিরে পুজো করে আসছেন। কালে কালে মন্দিরের আকার বৃদ্ধি পায়। কালীর মূর্তিও নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘মন্দিরটি সাড়ে তিনশো থেকে চারশো বছরের প্রাচীন। ধন্বন্তরী হলেন দেবতাদের কবিরাজ। যিনি মরা মানুষকেও বাঁচিয়ে তুলতেন। মায়ের একটা স্বপ্নাদিষ্ট ওষুধ আছে, অব্যর্থ ওষুধ। গ্যাস, অম্বল জাতীয় রোগে এটি কাজ করে। সেই ওষুধ খেয়েই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠত রোগীরা। ওষুধটা ধন্বন্তরীর মত কাজ দিত বলে সবাই মাকে ধন্বন্তরী বলেই ডাকত। সেই থেকেই মায়ের নাম ধন্বন্তরী।’
সামনেই কালী পুজো। তাই এখন মন্দির সাজিয়ে তোলার কাজ চলছে। কালী পুজোয় নিষ্ঠা ভরে মায়ের পুজো হয়। ঐতিহ্য মেনে রাতে ছাগ বলি হয় এখনও। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পুজো চলে। মাকে মাংস ভোগ দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু সে মাংস নিরামিশ। পেঁয়াজ ও রসুন ছাড়া রান্না। এছাড়াও মাকে মাছের পদ ভোগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি খিচুড়ি, পোলাও, পায়েস ভোগ দেওয়ার রীতি আছে। পুজোর সময় কালীকে নতুন শাড়ি, সোনার গয়নায় সাজিয়ে তোলা হয়।