ইংরেজরা ডুয়ার্সের হ্যামিল্টনগঞ্জে কালীপুজো শুরু করেছিল, কেন জানেন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ব্রিটিশ স্মৃতি বিজরিত শতাব্দী প্রাচীন হ্যামিল্টনগঞ্জের কালীপুজো। ডুয়ার্সের কালচিনির অন্যতম ঐতিহ্যবাহী পুজো এটি। ১৯১৬ সালে ইংরেজ সাহেব হ্যামিল্টনের উদ্যোগে এই কালীপুজোর সূচনা হয়। পুজো উপলক্ষে আজও হ্যামিল্টনগঞ্জ কালী বাড়ির প্রাঙ্গনে বসে বিশাল মেলা। এবছর এই পুজো ১০৭ তম বর্ষে পদার্পণ করল।
এই পুজো শুরুর নেপথ্যে জড়িয়ে রয়েছে এক অজানা কাহিনি। জানা গিয়েছে, উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ডুয়ার্সের এই এলাকায় অনেক চা বাগান তৈরি করেছিলেন ইউরোপীয়ন সাহেবরা। সেই সময় চা বাগানে কাজ করার সময় ছোটোনাগপুর, রাঁচি সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনা হয়েছিল শ্রমিক । পুজোর সময় ছুটিতে অনেকে তাদের নিজের বাড়িতে চলে যেত এবং ফিরে আসতোনা আর এর ফলে বাগানে শ্রমিক সঙ্কট দেখা দেয়। চা শ্রমিকরা যাতে নিজের বাড়িতে না চলে যায় তার জন্য হ্যামিল্টনগঞ্জে কালিপুজো চালু করেন তিনি। এরজন্য একটি কাঠের তৈরি মন্দির ও মাটির প্রতিমা স্থাপন করেছিলেন তারা। পরবর্তীকালে এই কালিপুজোকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করে ইউরোপীয়ন সাহেবরা। স্বাধীনতার পর পরবর্তীকালে পার্শ্ববর্তী চা বাগানের শ্রমিক ও স্থানীয়দের সাহায্যে পাকা মন্দির ও ২০০২ সালে পাথরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
প্রতিবছরের মতো জাকজমকপূর্ণভাবে আয়োজন করা হয় কালি পুজোর। পুজোর দিনে আলিপুরদুয়ার জেলা ছাড়াও আশপাশের একাধিক জেলা থেকে ভক্তরা মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। ইউরোপিয়ান সহেবদের হাত ধরে পুজো শুরু হলেও প্রাচীন রীতি নীতি এবং ঐতিহ্য এখনও অটুট আছে। এই পুজো উপলক্ষ্যে মেলা সেই সময়ের মানুষের মনোরঞ্জনের অন্যতম উৎস ছিল জানা যায়। মেলা চলে ১২ দিন। সারা বছর মানুষেরা যেখানেই থাকুক না কেন, এই মেলার সময় প্রায় সকলেই এই মেলায় যোগদান করেন। এই মেলায় দোকান, নাগরদোলার পাশাপাশি সার্কাসও থাকে। বহু ভাষাভাষীর মানুষের মেল বন্ধন ঘটে হ্যামিল্টনগঞ্জ কালিপুজোর এই মেলায়।