স্ত্রী রান্না করেন না, বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন স্বামীর, কী বলল আদালত?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দাম্পত্য জীবনে স্বামী ও স্ত্রীর রয়েছে নির্দিষ্ট অধিকার ও কর্তব্য। স্বামী ও স্ত্রী একে অন্যের সহায়ক ও পরিপূরক। সুতরাং উভয়েরই রয়েছে উভয়ের প্রতি বিশেষ দায়িত্ব ও করণীয়। প্রচলিত ধারনা বিয়ের পর স্ত্রী’র ভাত-কাপড়ের দায়িত্ব স্বামীর এবং স্বামীকে রান্না করে খেতে দেওয়া, অফিস যাওয়ার সময় টিফিন গুছিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সংসারের ভালোমন্দর খেয়াল রাখবে স্ত্রী। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই নিয়মের পরিবর্তন ঘটছে। যা নিয়ে অনেক সংসারে অশান্তি বাধছে, এমনকী বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই বিষয়ে এবার গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল কলকাতা হাই কোর্ট।
দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা নন্দন কুমার (নাম পরিবর্তিত)স্ত্রীর বিরুদ্ধে মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ এনে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জানিয়েছিলেন। আবেদনের স্বপক্ষে তাঁর যুক্তি ছিল, বিয়ের কিছুদিন পর থেকে তাঁর স্ত্রী কবিতা কুমারী (নাম পরিবর্তিত) তাঁর প্রতি উদাসীন। অন্যত্র গিয়ে থাকতে ক্রমাগত চাপ তৈরি করছেন। আয়ের হিসেব চাইছেন ও খরচ তাঁর মতো করে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন। এর পাশাপাশি কুন্দনের অন্যতম যুক্তি ছিল, স্ত্রী তাঁকে রান্না করে দেন না। অফিস যাওয়ার সময় টিফিন গুছিয়ে দিতেও অস্বীকার করেন। অতএব, বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন মঞ্জুর করে মানসিক অত্যাচার থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হোক।
একই আবেদন জানিয়ে প্রথমে তিনি নিম্ন আদালত অর্থাৎ শিয়ালদহ কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। নিম্ন আদালতে আবেদন খারিজ হওয়ায় তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সম্প্রতি বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানিতে নন্দনের আইনজীবী দাবি করেন, স্ত্রী স্বামীর জন্য রান্না করতে অস্বীকার করেন। অফিসে বেরনোর সময় টিফিন গুছিয়ে দেন না। বাধ্য হয়ে স্বামীকে দিনের পর বাইরের খাবার খেতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, স্বামীর অনুমতি ছাড়াই স্ত্রী তাদের এক বছরের সন্তানকে নিয়ে দিনের পর দিন বাপের বাড়িতে থেকেছেন। এমন ‘মানসিক অত্যাচার’ থেকে মুক্তির জন্য বিচ্ছেদের এই আবেদন।
কিন্তু সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন কবিতার আইনজীবী। আদালতকে তিনি জানান, তাঁর মক্কেল স্বামীর সঙ্গে থাকতে প্রস্তুত। স্বামীর জন্য রান্না না করার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। সমস্ত তথ্য যাচাইয়ের পর আদালত জানিয়েছে, রান্না না করা বা বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া ইত্যাদি অভিযোগের স্বপক্ষে কোনও পোক্ত প্রমাণ নেই। তাছাড়া, এগুলি স্বামী-স্ত্রী’র নিত্যদিনের ঝামেলার মধ্যে পড়লেও মানসিক অত্যাচার বলা যাবে না। এরপরই স্বামীর দায়ের করা বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।