স্বাস্থ্য বিভাগে ফিরে যান

#WorldDiabetesDay : ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি ও কী কী পরীক্ষা জরুরি?

November 14, 2023 | 3 min read

টাইপ টু ডায়াবেটিস, ছবি সৌজন্যে: Getty

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: প্রতি বছর বিশ্ব ডায়াবিটিস দিবস ১৪ নভেম্বর পালিত হয়। এই দিন স্যর ফ্রেডরিক ব্যান্টিংয়ের জন্মদিন। তিনি প্রথম ইনসুলিন হরমোন আবিষ্কার করেছিলেন। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে প্রায় ৪৬৩ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত। এই রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকা খুবই জরুরি। যাতে সময় থাকতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

ডায়াবিটিসে আক্রান্ত একটি বড় অংশ ভবিষ্যতে হৃদ্‌রোগ, কিডনি অকার্যকারিতা, স্নায়ুবৈকল্য ও অন্ধত্বের মতো সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এ রোগে কী কী সমস্যা হতে পারে, তা জানা উচিত।

কিডনির সমস্যা: কিডনি খারাপ হওয়ার প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। কিডনি কেমন কাজ করছে, তা বুঝতে ডায়াবেটিসের রোগীদের বছরে অন্তত একবার প্রস্রাবের অ্যালবুমিনের মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত। অ্যালবুমিন ক্রিয়েটিনিন রেশিও সবচেয়ে কার্যকর পরীক্ষা। কিডনি ভালো রাখতে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে।

হৃদ্‌রোগ: বলা হয়, ৭০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী কোনো না কোনো সময়ে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। আরও শঙ্কার কথা হলো, ডায়াবেটিসের রোগীদের হৃদ্‌রোগের তেমন কোনো উপসর্গ না–ও থাকতে পারে।

অন্ধত্ব: বিশ্বে অন্ধত্বের অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। তাই ডায়াবেটিসের রোগীকে বছরে এক–দুইবার অবশ্যই চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। এই চোখ পরীক্ষা মানে চশমার পাওয়ার দেখা নয়। চোখের রেটিনায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে কি না, কিংবা চোখের অভ্যন্তরে প্রেশার বেড়ে গ্লুকোমা হচ্ছে কি না, সেটি বিবেচ্য।

স্নায়ুবৈকল্য: ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পায়ে জ্বালা, ব্যথা, কামড়ানো, সুচ ফোটার অনুভূতি হতে পারে। অনুভূতিশূন্য মনে হতে পারে। পরবর্তী সময়ে এ থেকে ঘা, আলসার, সংক্রমণ এমনকি পা কেটে ফেলা পর্যন্ত গড়াতে পারে। তাই নিয়মিত যত্নের পাশাপাশি পায়ের ত্বকে যেকোনো ক্ষত, সংক্রমণ, ছত্রাক, রঙের পরিবর্তন বা ফোসকা পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ডায়াবেটিসের রোগীদের এসব ঝুঁকি ছাড়াও মস্তিষ্কে রক্তরক্ষণ, চোখে ছানি, প্রস্রাবে সংক্রমণ, ফোড়া ও সন্তান প্রসবে জটিলতা ইত্যাদির হার বেশি। তাই সঠিক সময়ে পরীক্ষা ও নিয়মিত চিকিৎসাই এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার একমাত্র উপায়। দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস থাকলে চলতি পরীক্ষাগুিলর সঙ্গে বাড়তি কিছু পরীক্ষা করারও প্রয়োজন আছে।

কখন কী কী পরীক্ষা?
ক. যখন নিজের ডায়াবেটিস নেই, পরিবারেও রোগের ইতিহাস নেই
১. বয়স ৩০ পেরলে অন্তত ৮ ঘণ্টা না খেয়ে (ফাস্টিং) বা খালি পেটে ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খেয়ে তার দু’ঘণ্টা পর টেস্ট (পিপি) অথবা এইচবিএ১সি —তিনটির একটি পরীক্ষা করতে হবে।
২. প্রথমবারের পরীক্ষায় রিপোর্ট ঠিক থাকলে দু’তিন বছর অন্তর ফের পরীক্ষা করলে চলবে।
৩. যদি দেখা যায় রক্তে শর্করার মাত্রা একেবারে বর্ডার লাইনে, লাইফস্টাইলগত পরিবর্তন করতে হবে। তিনমাস পর ফের পরীক্ষা করতে হবে।

খ. নিজের ডায়াবেটিস নেই, পারিবারিক ইতিহাসে সুগার আছে
১. পারিবারিক ইতিহাসে ডায়াবেটিস থাকলেও এই তিন পরীক্ষার একটি করে দেখতে হবে।
২. রিপোর্ট ভালো এলেও এই টেস্ট অন্তত ১ বছর অন্তর করতে হবে।
৩. রিপোর্ট বর্ডার লাইনে থাকলে লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে ফের তিন মাসের মাথায় পরীক্ষা করতে হবে।
৪. বছরে একবার লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করিয়ে নেওয়াও বাধ্যতামূলক।
৫. ওবেসিটি বাড়তে দেওয়া চলবে না (এটি সকলের ক্ষেত্রেই)।

গ. সদ্য ডায়াবেটিস ধরা পড়লে
ডায়াবেটিস ধরা পড়লে শুধু সুগার পরীক্ষাই নয়, সারা বছর দরকার আরও কিছু টেস্ট করে নেওয়া। তা রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
১. তিন-চার মাস অন্তর ফাস্টিং, পিপি ও তিন মাসের গড় ধরে এইচবিএ১সি টেস্ট করতে হবে।
২. বছরে একবার লিপিড প্রোফাইল, একটি ইসিজি (হার্টের অসুখ না থাকলেও) এবং একটি রেনাল ফাংশন টেস্ট করতে হবে।
৩. বাড়িতে কিনে রাখতে হবে কন্টিনিউয়াস গ্লুকোজ মনিটরিং মেশিন অথবা গ্লুকোমিটার।
সেখানেও মাঝে মাঝেই দেখে নিতে হবে গ্লুকোজের পরিমাণ। সুগার ফল করার সমস্যা এক্ষেত্রে দ্রুত ধরা পড়বে।

ঘ. দীর্ঘদিন সুগার থাকলে
১. দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভুগলে তিন চার মাস অন্তর ফাস্টিং, পিপি ও এইচবিএ১সি পরীক্ষা করতে হবে। পরীক্ষার ফল যা-ই আসুক, পরামর্শ নিতে হবে চিকিৎসকের।
২. ছ’মাস অন্তর রেনাল ফাংশন টেস্ট করতে হবে। কিডনির পরীক্ষা অবশ্যকর্তব্য।
৩. ছ’মাস অন্তর চোখের পরীক্ষা বাঞ্ছনীয়। দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভুগলে রেটিনোপ্যাথি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
৪. চার মাস অন্তর ইসিজি ও লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করতে হবে।
৫. ত্বকের সমস্যা থাকলে ত্বকবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
নিয়মিত পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলা জরুরি।
ওজন কমানো ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করা এবং দিনে এক ঘণ্টা শরীরচর্চাও ডায়াবেটিসের সঙ্গে লড়াই করার অন্যতম হাতিয়ার। তাই পরীক্ষার ঘরে ঢিলেমি দেওয়া যাবে না।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Health, #Diabetes, #health sector, #Health hazards, #world diabetes day

আরো দেখুন