রবিবারের ফাইনালের আগে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ৬টি রোমাঞ্চকর লড়াই
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে অপরাজিত থাকা ভারত ও পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। টুর্নামেন্টের সফলতম দল ও এবারের আসরের সবচেয়ে ধারাবাহিক দলের শিরোপানির্ধারণী লড়াইটি হবে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মাঠ আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে।
২০ বছর আগের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া দলের সঙ্গে এবার ভারতীয় দলের মিল রয়েছে বিস্তর। রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ভারতকে হারিয়ে দিয়েছিল। এবার ভারতীয় দলও গ্রুপের ম্যাচে প্যাট কামিন্সের অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয়। সেবারও অজিরা একটি ম্যাচও না হেরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবার রোহিতরা খেতাব জিতলে সেই রেকর্ডই স্পর্শ করবে। পন্টিংয়ের দলের মতোই রোহিতরাও ১০টি ম্যাচ জিতেছে।
২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়া তিনবারের মতো বিশ্বসেরা হয়েছিল। এবার রোহিতের ভারতীয় দলের ক্ষেত্রেও তাই হবে। ভারত এই নিয়ে তিনবার খেতাব জিতবে।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দলের সঙ্গে এবারের দলের দুটি বিষয়ে মিল রয়েছে। সেবারও বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের মালিক ছিলেন এক ভারতীয়, তিনি শচীন তেন্ডুলকার, করেছিলেন ৬৭৩ রান। এবারও বিরাট কোহলি সকলের আগে রানের শীর্ষে, তাঁর রান ফাইনালের আগে পর্যন্ত ৭১১।
রবিবারের বিশ্বকাপ জেতার লড়াইয়ের আগে সংবাদ সংস্থা এএফপি এই দুই পাওয়ার হাউসের অবিস্মরণীয় ছয়টি ম্যাচ বাছাই করেছে।
শচীনের মরুঝড়: ২২ এপ্রিল, ১৯৯৮
শারজায় ত্রিদেশীয় কোকাকোলা কাপের লিগ পর্বের শেষ ম্যাচ। প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়ার তোলে ৭ উইকেটে ২৮৪ রান। যে রান ভারত তাড়া করতে নামলে মাঝপথে বালিঝড় হানা দেয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ম্যাচ আধঘণ্টার মতো বন্ধও থাকে। এরপর খেলা শুরু হলে ভারতের জয়ের জন্য পরিবর্তিত লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৭৬ রান, আর ফাইনালে ওঠার জন্য ২৩৫ রান। ভারত শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি, তবে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে ফাইনালে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় রান ঠিকই তুলে নিয়েছিল। আর তাতে সিংহভাগ অবদান ছিল শচীন তেন্ডুলকরের।
শচীন সেদিন ডেমিয়েন ফ্লেমিং, মাইকেল ক্যাসপ্রোউইচ ও শেন ওয়ার্নদের নিয়ে গড়া অস্ট্রেলিয়ান বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে বিধ্বংসী ব্যাটিং করেছিলেন। দলকে ২৩৫ রান পার করে আউট হওয়ার আগে ১৩১ বলে তোলেন ১৪৩ রান। অনেকের চোখেই এটি ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস। মরুভূমির দেশে বালিঝড়ের দিনে খেলা তেন্ডুলকারের এই ইনিংসকে ‘মরুঝড়’ও বলা হয়।
পন্টিংয়ের দাপট: ২৩ মার্চ, ২০০৩
জোহানেসবার্গের ম্যাচটি ছিল বিশ্বকাপের ফাইনাল। দিনের শুরুতে টস জেতেন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। তবে ব্যাট হাতে ম্যাচের আসল নায়ক হয়ে ওঠেন টসে হারা অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক রিকি পন্টিং। ম্যাথু হেইডেন ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের উদ্বোধনী জুটি ১৪ ওভারের মধ্যে ১০৫ রান তুলে দিলে অস্ট্রেলিয়াকে সাড়ে তিনশোর ওপারে নিয়ে যান পন্টিং।
দ্বিতীয় উইকেট ডেমিয়েন মার্টিনকে (৮৮*) সঙ্গী করে গড়েন অবিচ্ছিন্ন ২৩৪ রানের জুটি। অস্ট্রেলিয়ার ২ উইকেটে ৩৫৯ রানের মধ্যে ১৪০ রানই পন্টিংয়ের। ১২১ বল খেলা ইনিংসটিতে ছিল ৪টি চার ও ৮টি ছয়। রান তাড়ায় বড় সংগ্রহের পেছনে ছুটতে গিয়ে ৩৯.২ ওভারে ২৩৪ রানে থেমে যায় ভারতের ইনিংস।
তীরে এসে ডুবল তরী: ৫ নভেম্বর, ২০০৯
হায়দরাবাদে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের সে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম উইকেটে ১৪৫ রান এনে দেন শেন ওয়াটসন–শন মার্শ। ওয়াটসন ৯৩ রান করে ফিরলেও মার্শ পৌঁছান তিন অঙ্কে (১১২)। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে ৩৫০ রানের পুঁজি গড়ে অস্ট্রেলিয়া। রান তাড়ায় শচীন তেন্ডুলকর একাই খেলেন ১৭৫ রানের ইনিংস। ১৪১ বলের ইনিংসটিতে ১৯টি চারের সঙ্গে ছিল ৪টি ছয়।
তবে তেন্ডুলকার যতটা উজ্জ্বল ছিলেন, ততটাই নিরুত্তাপ ছিলেন ভারতের বেশির ভাগ ব্যাটসম্যান। সুরেশ রায়নার ৫৯ ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান পঞ্চাশের ঘরেই যেতে পারেননি। ১১ জনের মধ্যে ৭ ব্যাটসম্যান এক অঙ্কে আউট হওয়ার ম্যাচটিতে ভারত হারে মাত্র ৩ রানে, যদিও বল বাকি ছিল ২টি। ম্যাচের পর তেন্ডুলকারের ইনিংসটির প্রশংসা করে রিকি পন্টিং বলেছিলেন, ‘অন্যতম সেরা একটি ম্যাচ এবং শচীনের এযাবৎকালের অন্যতম সেরা ইনিংস।’
নকআউট পাঞ্চ: ২৪ মার্চ, ২০১১
রিকি পন্টিংয়ের ১০৪ রানে ভর করে অস্ট্রেলিয়া তুলেছিল ৬ উইকেটে ২৬০ রান। ম্যাচটা বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল হওয়ায় এই রানই মহেন্দ্র সিং ধোনির দলের জন্য বড় লক্ষ্য হয়ে ওঠে। শচীন টেন্ডুলকর ৫৩ ও গৌতম গম্ভীর ৫০ রান করে আউট হয়ে গেলে ভারতকে ভর করতে হয় যুবরাজ সিংয়ের ব্যাটে। শেষ পর্যন্ত ১৪ বল বাকি থাকতে যুবরাজের অপরাজিত ৫৭ রানে ৫ উইকেটে জেতে ভারত। পরে সেমিফাইনালে পাকিস্তান এবং ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ট্রফি জেতে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। ভারত–অস্ট্রেলিয়ার কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি হয়েছিল আহমেদাবাদের সর্দার প্যাটেল স্টেডিয়ামে, সংস্কারের পর যার নাম এখন নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম
ব্যাটিং–রাজত্ব: ১৬ অক্টোবর, ২০১৩
জয়পুরের স্বামী মানসিংহ স্টেডিয়ামে হওয়া ম্যাচটি ছিল বিরাট কোহলির, মাত্র ৫২ বলে তুলেছিলেন ১০০ রান। সে দিন অস্ট্রেলিয়ার ৫ উইকেটে ৩৫৯ রান তাড়া করতে নেমে ভারতের সর্বোচ্চ ইনিংসটি অবশ্য কোহলির ছিল না। শিখর ধাওয়ানের (৯৫) সঙ্গে ১৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটিতে সঙ্গ দেওয়া রোহিত শর্মা খেলেন ১২৩ বলে ১৪১ রানের ইনিংস। তবে ৮ চার ৭ ছয়ে ঝোড়ো শতক তুলে কোহলিই নিজের দিকে আলো কেড়ে নেন। ভারত জেতে ৯ উইকেটে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৯২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা জর্জ বেইলি ম্যাচ শেষে ভারতের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছিলেন ‘দুর্দান্ত ব্যাটিং’।
স্মিথের প্রতিশোধ: ২৬ মার্চ, ২০১৫
২০১১ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ভারত। এবার নিজেদের মাঠে ভারতকে সেমিফাইনালে হারায় অস্ট্রেলিয়া। সিডনিতে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ৩২৮ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া, যেখানে ৯৩ বলে ১০৫ রান স্টিভেন স্মিথের। রান তাড়ায় ভারত জয়ের সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি। জেমস ফকনার ৩টি ও মিচেল জনসন ও মিচেল স্টার্ক ২টি করে উইকেট নিলে ২৩৩ রানে গুটিয়ে যায় ভারতের ইনিংস। শেষ পর্যন্ত ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেবার বিশ্বকাপ ট্রফিও জেতে অস্ট্রেলিয়া।