পুতুল নাচ-যাত্রার মিশেলে বারুইপুরে রায়চৌধুরীদের প্রাচীন রাস উৎসবের ইতিকথা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আর কিছুদিনের অপেক্ষা। তারপরেই বঙ্গে শুরু হবে রাস পূর্ণিমা। বাংলার প্রাচীন রাসযাত্রার মধ্যে অন্যতম বারুইপুর রায়চৌধুরী বাড়ির রাসযাত্রা। জমিদার রাজবল্লভ রায়চৌধুরীর সময় থেকেই রাসযাত্রার সূত্রপাত, যা আজও সাড়ম্বরে পালিত হয়ে আসছে।
এক সময় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও বেশ কিছুদিন এই বাড়িতে থেকেছিলেন। কথিত আছে, ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের একটা বড় অংশ এই বাড়িতে বসে লেখা হয়েছিল। জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ৩২৫ বছর আগে রায় চৌধুরী বাড়িতেই রাসযাত্রার সূচনা হয়েছিল। শোনা যায়, জমিদার রাজবল্লভ রায় প্রথম সোনারপুরের রাজপুরে এই উৎসবের সূচনা করেছিলেন। রাধা মূর্তি রাজপুরে জমিদার বাড়িতে ছিল। বারুইপুরে জমিদারবাড়িতে কৃষ্ণ বিগ্রহ নিয়ে চলে আসেন দুর্গাচরণ রায়চৌধুরী। পরে সেখানে রাধা মূর্তি কিনে বারুইপুরে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে তিনি রাস উৎসব শুরু করেন। যা আজও প্রাচীন প্রথা এবাং ঐতিহ্য অনুসারে চলে আসছে।
এই বাড়ির মন্দির থেকে রাধা-কৃষ্ণ, বলরামের মূর্তি শোভাযাত্রা সহকারে রাসমাঠের নাটমঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। ৩ দিন ধরে চলে পুজো। পুজোর পরে রাত ১২টা থেকে ফাটানো হয় বাজি। প্রত্যি বছরের মতো রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে বারুইপুরের রাসমাঠে চলে একমাস ব্যাপী মেলা আর সার্কাস। বসে হাতে টানা পুতুল নাচ, যাত্রা, তরজার আসর। যা দেখতে দূরদুরান্তের মানুষের সমাগম হয় এই রাসমাঠে। স্থানীয় যাত্রাদলই পালা পরিবেশন করে। মথুরাপুরের পুতুল নাচের শিল্পীরা বংশানুক্রমে অনুষ্ঠান করেন এখানে।
এছাড়াও, এই রাস পূর্ণিমাকে কেন্দ্র রাসমাঠে বসে কয়েকশো মেলা। সেই মেলায় দেদার বিক্রি হয় হরেকরকম জিনিস। বিশেষ করে জিলিপি ও বাদাম। এছাড়াও লোহার ও কাঠের তৈরি জিনিসপত্র ও গাছের দোকান। বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির রথ দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীরা ছুটে আসেন। জানা গিয়েছে আজ, বুধবার এই সার্কাসের উদ্বোধন হতে চলেছে। প্রাচীন এই রাস উৎসবকে ঘিরে তাই উন্মাদনা তুঙ্গে।