নবদ্বীপের ঐতিহ্যবাহী রাসেরও মন এখন থিমের পানে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: নবদ্বীপের রাস উৎসবে তিন শতাধিক শাক্ত দেব-দেবীর পুজোই ঐতিহ্য রাস পূর্ণিমায়। রাস উৎসব ঠিকই, তবু নবদ্বীপে শাক্ত দেবদেবীর তুলনায় রাধাকৃষ্ণ এবং অন্যান্য বৈষ্ণব মূর্তির সংখ্যা নেহাতই কম। তাই নবদ্বীপের রাসকে শাক্ত রাস বলে আখ্যায়িত করা হয়!
বৈষ্ণবদের প্রিয় উৎসব রাস বহু প্রাচীন। চৈতন্যদেবের আগে সে উৎসবের রূপ ছিল ভিন্ন। ইতিহাস বলছে, চৈতন্যযুগে রাসের আমূল পরিবর্তন ঘটে। মহাপ্রভুর প্রভাবে যাবতীয় বৈষ্ণবীয় উৎসবের মতো আমূল বদলালো নবদ্বীপের রাসের রূপও। কিন্তু, বৈষ্ণবীয় ধারা থেকে স্বতন্ত্র নবদ্বীপের রাসের শুরু নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্ব কালে।
এবার নবদ্বীপের রাস উৎসবে সেইসব প্রতিমাসজ্জায় বৈচিত্রের পাশাপাশি লেগেছে থিমের চমকও। নবদ্বীপের রাসের অন্যতম ঐতিহ্য বড় প্রতিমা। রীতিমতো ঘাড় উঁচু করে প্রতিমা দর্শন করতে হয় দর্শনার্থীদের। এইসব দেব-দেবীর মূর্তি দর্শনে ভিড় করেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুণ্যার্থী ও পর্যটক। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে সাবেকিয়ানা থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে শহরের কিছু ক্লাব ও বারোয়ারি। থিম ও সিনারির পুজোকে কেন্দ্র করে কোন মণ্ডপ কত দর্শনার্থী টানতে পারছে, তা নিয়েও উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে।
নবদ্বীপ কুঠিরপাড়া মুক্তিসূর্য ক্লাবের ভারতমাতা পুজো অন্যতম। এবারের প্রতিমার থিম ‘রাজ বেশে ভারতমাতা’। বাহুবলি সিনেমার আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। প্যান্ডেলের উচ্চতা প্রায় ৮৫ ফুট। রাজবাড়ির ভিতরে তৈরি করা হয়েছে রাজ দরবারের পরিবেশ। মণ্ডপে ছ’টি মডেল থাকবে। সেই মডেলগুলি প্রজার। এখানে দেবীর অবস্থান দেখে মনে হবে তিনি যেন প্রজাদের নিয়ে বিচারসভা বসিয়ে তাঁদের অভাব, অভিযোগ শুনছেন। এছাড়া বৃন্দাবনের ইসকনের আদলে আলোক সজ্জা করা হবে। প্রায় ৫৮ ফুট উঁচু লাইটের গেট থাকছে। এবছর নতুনভাবে বসছে মেলা। পুজো দেখতে নবদ্বীপ ও সংলগ্ন জেলাগুলি থেকেও দর্শনার্থীরা ভিড় করেন এখানে। এবারও তার অন্যথা হবে না বলে আশাবাদী উদ্যোক্তারা।
নবদ্বীপ প্রাচীন মায়াপুর (সাউথ) ভারতমাতা বারোয়ারির পুজোর এবছরের থিম হল জন্মদাত্রী মা-ই আমার ঠাকুরঘরের মা। এই থিম পুজোর মধ্যে দিয়ে উদ্যোক্তারা বোঝাতে চেয়েছেন, জন্মদাত্রী মা অর্থাৎ তাঁর মাধ্যমেই ঠাকুর ঘরের মূর্তি পুজোর শুরু। তাই এই দুই মায়ের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।