উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

১৯ বছরে ৭৭টি হাতির মৃত্যু ডুয়ার্সে, রেলের নয়া প্রযুক্তি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

November 28, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ফের ডুয়ার্সের জঙ্গল চিরে যাওয়া রেল লাইনে মৃত্যু হল বন্যপ্রাণের। সোমবার সকালে রেল লাইন পেরনোর সময় আলিপুরদুয়ারের রাজাভাতখাওয়ায় মালগাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় দু’টি শাবক সহ মৃত্যু হয়েছে তিনটি হাতির। এই ঘটনায় ফের স্থানীয় বন্যপ্রাণ প্রেমীরা সোচ্চার হয়েছেন।


শিলিগুড়ি জংশন থেকে আলিপুরদুয়ার জংশন পর্যন্ত ডুয়ার্সের জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ১৬২ কিমি রেলপথ ২০০৪ সালে মিটার গেজ থেকে ব্রডগেজে উন্নীত হয়। সোমবার তিনটি হাতির মৃত্যুর ঘটনা ধরে ১৯ বছরে এই রুটে মোট ৭৭টি হাতির মৃত্যু হল। একের পর এক হাতির মৃত্যুর ঘটনাই বলে দিচ্ছে ডুয়ার্সের এই রেলপথ যেন কার্যত হাতিদের ‘মরণফাঁদ’-এ পরিণত হয়েছে।


২০১৩ সালে নাগরাকাটার জলঢাকায় একসঙ্গে সাতটি হাতি ট্রেনে কাটা পড়ে। তারও আগে ২০১০ সালে বানারহাটের কাছে মোরাঘাটের জঙ্গলে একসঙ্গে সাতটি হাতি ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায়। ডুয়ার্সের রেলপথে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মৃত্যুর এই দু’টিই ছিল সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। এরপর ২০১৪-’১৫ সালের দিকে বক্সার রাজাভাতখাওয়া জঙ্গলের মধুগাছতলায় একসঙ্গে তিনটি হাতি ট্রেনে কাটা পড়ে।


তারপরই ডুয়ার্সের রেলপথে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মৃত্যুর ঘটনা এড়াতে রেল ও বনদপ্তরের যৌথ সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। একাধিক বৈঠকও হয় ওই সমন্বয় কমিটির। রেলের তরফে নানা পদক্ষেপও নেওয়া হয়। রেল ট্র্যাকের ধারে হাতি যাতে না আসে, তারজন্য হাতির করিডরগুলিতে মৌমাছির গুঞ্জনের ক্যাসেট বাজানো হয়েছিল রেলের তরফে। কারণ হাতি মৌমাছিকে পছন্দ করে না। শুধু তাই নয়, ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু রুখতে রেলপথের দৃশ্যমানতা বাড়াতে ট্রেনের ইঞ্জিনে বিশেষ ডিভাইস লাগানো হয়। কিন্তু, এত ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু আটকানো যায়নি। যা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।


সোমবার সকালে রাজাভাতখাওয়ার শিকারি গেটের কাছে রেললাইনের উপর দিয়ে হাতির দল যাওয়ার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। রেলের পার্সেল বগিসহ ইঞ্জিনটি শিলিগুড়ির পথে যাচ্ছিল। ট্রেনের ধাক্কায় পিষে যায় একটি হাতির শাবক। অন্য একটি হাতির শাবক ও পূর্ণবয়স্ক হাতি ছিটকে যায় রেললাইন থেকে। আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম অমরজিৎ গৌতম জানিয়েছেন, হাতিগুলির দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মালগাড়ির চালক সহ প্রত্যেক কর্মীর মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হবে। তাঁরা কোনও ভাবে নেশাগ্রস্ত ছিল কিনা সে ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হবে। নেশাগ্রস্ত ছিল বলে প্রমাণিত উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।


রেল ও বনদপ্তরের যৌথ সমন্বয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। চাপরামারির জঙ্গলে ট্রেনের ধাক্কায় একটি হাতির মৃত্যুর পর বৈঠকে বসে ওই কমিটি। কিন্তু, ওই বৈঠকের পর দু’মাসও হল না, সোমবার রাজাভাতখাওয়ায় ট্রেনের ধাক্কায় ফের তিনটি হাতির মৃত্যু হল। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠনগুলি।


তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বন্যপ্রাণপ্রেমীরা। তাঁদের কথায়, ডুয়ার্সের রেল লাইন প্রথম থেকেই বন্যপ্রাণীদের বধ্যভূমি হয়ে উঠেছে। এব্যাপারে রেল উদাসীন। তাদের নানা ভাবে অনুরোধ করা হলেও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা ছাড়া তেমন কোনও তৎপরতা চোখে পড়ে না। যদি চালকদের গাফিলতিতে এই মৃত্যু হয়ে থাকে তাহলে তাদের শাস্তি চাই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#North Bengal, #dooars, #Elephants, #Elephant Death, #Indian Railway

আরো দেখুন