পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

“মরকা” থেকে কিভাবে নামান্তরে “বোল্লা” কালী? জানুন এই পুজোর ইতিহাস

November 30, 2023 | 2 min read

“মরকা” থেকে কিভাবে নামান্তরে “বোল্লা” কালী?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: “ধর্ম যার যার, বোল্লা মা সবার ”। সম্প্রতির মেলবন্ধন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী বোল্লা রক্ষা কালী পুজো। এবার এই মায়ের পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেল। প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী মন্দির চত্বরেই রয়েছে পবিত্র মায়ের পুকুর। সেখান থেকেই বিজয়া দশমীর পরের শুক্রবারে সেই পুকুর থেকে মায়ের কাঠামো তুলে দুধ দিয়ে ধুয়ে পুজো শুরু হয়। এরপর মায়ের মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয় মন্দিরেই। কাঠামো পুজো দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় করেন অগণিত ভক্তরা। চলতি সপ্তাহের শুক্রবার ১লা ডিসেম্বর সাড়ম্বরে পূজিত হবেন মা “বোল্লা” কালী। সোমবারে মায়ের বিসর্জন হয়। জোর কদমে চলছে এই পুজোর শেষ প্রস্তুতি।

বর্তমানে সাড়ে সাত হাত বোল্লা মায়ের মূর্তি পুজো করা হয়। কয়েক হাজার পাঁঠাবলি ও একটি মহিষ বলি হয়। প্রায় ২০ কেজির বেশি সোনার গহনায় মাতৃ প্রতিমা সাজানো হয়। বহু ভক্ত মানত করা ছোট ছোট কালী মূর্তিতে পুজো দেন ও বাতাসা নৈবেদ্য অর্পণ করেন। স্থানীয় মুসলিমরাও হিন্দুদের সাথে মায়ের উদ্দ্যেশ্যে পুজো দেন।

উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বোল্লা কালী পুজো ঘিরে বিশাল মেলা হয়। দুই দিনাজপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা ও রাজ্য, এমনকি বাংলাদেশ থেকেও বহু ভক্ত এই মেলায় সমবেত হন। শোনা যায়, জমিদার বল্লভ মুখোপাধ্যায় নাম থেকে অঞ্চলটির নাম হয় বোল্লা। বোল্লা গ্রামে অবস্থিত রক্ষা কালী মাতা ‘বোল্লা রক্ষা কালী’ বা ‘বোল্লা কালী’ নামে ভক্ত মহলে সুপ্রসিদ্ধ। আর সে থেকেই বোল্লা কালী মাতার পুজো হয়ে আসছে ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহ।

কথিত রয়েছে, ১৯২০সালে জনৈক এক ব্যক্তি মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুকুর থেকে মায়ের শিলাময় রূপটি উদ্ধার করেন ও প্রতিষ্ঠা করে নিত্য পুজো শুরু করেন। এই সময়ে মাকে ‘মরকা কালী’ বলে ডাকা হত। প্রতি জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যায় হত মায়ের বিশেষ পুজো। এরপর ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় জমিদার মুরারিমোহন চৌধুরী ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় বহু গ্রামবাসী সহ তিনি গ্রেপ্তার হন। তখন তিনি মড়কা কালী মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন। তিনি বেকসুর খালাস পান। জ্যৈষ্ঠ মাস আসতে দেরি থাকায়; সেই সময় তিনি ধার্য করেন যে, রাস পূর্ণিমার পরবর্তী শুক্রবারে মায়ের পুজো করবেন। সেই থেকে দেবীর বাৎসরিক পুজো ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। শুরুতে ছোট করে পুজো হলেও কালক্রমে পুজোর বহর ও কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রাচীন এই বোল্লা রক্ষা কালীর পুজোতে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। আগামী শুক্রবার জাগ্রত বোল্লা পুজো ঘিরে মানুষের মধ্যে খুশির শেষ নেই। এই বোল্লা কালী পুজোর প্রধান প্রসাদ “কদমা ও বাতাসা”। বাতাসার মধ্যে বিভিন্ন প্রাণীর অবয়বে আকারে প্রসাদ তৈরি করা হয়। পাশাপাশি মানতের বিভিন্ন আকারের ছোট-বড় বোল্লা কালীর পুজো দেওয়া হয়। বোল্লা কালীর হাতে থাকে আড়াই টনের সোনার রামদা এবং মন্দিরের সমস্ত অলংকার। পুজো প্রাঙ্গণে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবছরও থাকছে নানা ব্যবস্থা। সাদা পোশাকের পুলিশ প্রহরার পাশাপাশি মন্দির চত্বর সিসিটিভির আওতায় থাকছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #balurghat, #Bolla Kali Puja, #bolla ma

আরো দেখুন