আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে ঐতিহ্য-ধর্মীয় আবেগের মেলবন্ধনে নবদ্বীপের রাস কার্নিভাল
বৃন্দাবনের জ্যোৎস্না-পথে শ্রীমতি রাধা চলেছেন সখী পরিবৃত হয়ে। যমুনার তীরে আজ বসন্ত রাস। পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে। খুশিতে উদ্বেল সকলে। উড়ছে আবির গুলাল। অকাল হোলিতে ভাসছে চারদিক। হেমন্তসন্ধ্যার শিশির মাখা গোলাপ পাপড়ি ঝরছে রাজপথে। সখীদের পিচকারি থেকে অনর্গল রঙের ধারা। রঙ্গ সারি গুলাবি চুনারিয়া রে…।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এমনই রংবেরঙের খণ্ডচিত্রের সাক্ষী থাকল নবদ্বীপ। কার্নিভালে এইসব চমক দেখতে উপচে পড়েছিল ভিড়। কার্নিভালের শোভাযাত্রা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ভিড় জমান অসংখ্য মানুষ। কার্নিভাল দেখতে বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষ এসে উঠেছিলেন স্থানীয় হোটেলগুলিতে। এদিন দুপুরের পর থেকে নবদ্বীপ ধাম ও বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনে ট্রেন থেকে নামেন বহু মানুষ। রাস্তার দু’ধারে, এমনকী বাড়ির ছাদেও ছিল থিকথিকে ভিড়।
এবারের কার্নিভালে মোট ১৬টি ক্লাব ও বারোয়ারি অংশ নিয়েছিল। বড়ালঘাটের ধামেশ্বর মহাপ্রভু ও ভুবনেশ্বরী মাতা যেমন ছিল, তেমনই ছিল কোলেরডাঙা ঘোষপাড়ার গঙ্গামাতা, চারিচারা বাজার রোডের বাবা তারকনাথ, নেতাজি সঙ্ঘের মহিষমর্দিনী মাতা,নবীন সঙ্ঘের হরগৌরী মাতা, ওয়াইএমএ ক্লাবের ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ, শ্রীবাসঅঙ্গন বারোয়ারি কমিটির চক্ররাস, ষষ্ঠীতলার নবদুর্গা, বৈদিকপাড়ার মহীরাবণ বধ, প্রাচীন মায়াপুরের শিব ও গঙ্গামাতা, বনচারী বাগানের গঙ্গামাতা, সংগঠনি ক্লাবের মহিষমর্দিনী মাতা, নিশান ক্লাবের নটরাজ, রাধাবাজারের মহিষাসুর বধ। প্রতিটি ক্লাব একে অপরকে টেক্কা দিতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিল।
তবে এদিন এই কার্নিভালে বাড়তি আকর্ষণ ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিল্পীদের উপস্থাপনা। এর সঙ্গে ছোট্ট নিমাইকে কোলে নিয়ে রয়েছেন শচীমাতা, নৃত্যরত জীবন্ত শিব ও কালী, শিবের অনুচর এ সবকিছু তো ছিলই। কলকাতা থেকে কাকদ্বীপ, মেদিনীপুর থেকে মণিপুর ঢুঁড়ে উদ্যোক্তারা খুঁজে এনেছেন লোকনৃত্য, লোকনাট্য ও গানের দল। কেউ নাচে জোর দিচ্ছেন, কেউ গানে। কারও বাজি রায়বেঁশে, কারও অস্তিনে লুকনো বৃন্দাবনী নৃত্য। রণপা নৃত্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে যদি ময়দানে নামে ছৌ, তাহলে মণিপুরি নাচকে চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকছে কথাকলিও।
চন্দননগরের মেকানিক্যাল লাইটিংয়ের মাধ্যমে গাড়িতে সিদ্ধিদাতা গণেশ, ধনদেবী লক্ষ্মী এবং বিদ্যার দেবী সরস্বতী, তিন দেবদেবীর ২২ ফুট উচ্চতার লাইটের ট্যাবলো ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। শোভাযাত্রায় আগাগোড়া চন্দননগরের আলোর মায়াবি রোশনাই ছিল।
কার্নিভালে বোম্বে ঢোল নিয়ে নাসিক থেকে এসেছিলেন বোম্বে ঢোল বাদক প্রতীক টেটে। তিনি বলেন, আমরা ১২ শো কিলোমিটার দূর থেকে দু’টি বাসে ৭২ জন এসেছি। এর মধ্যে ২০ জন মেয়ে বাদকও আছেন। প্রতিটি বারোয়ারি ও ক্লাব তাদের শোভাযাত্রায় নামসংকীর্তন ও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রতিকৃতি নিয়ে বের হয়েছিলেন।