কুঞ্জভঙ্গের অনুষ্ঠানে বড় গোস্বামী বাড়িতে ভক্তদের ঢল, একশোরকম মিষ্টি নিবেদন রাধারমণকে
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: নদীয়ার অদ্বৈতভূমি শান্তিপুর ও চৈতন্যভূমি নবদ্বীপের রাস উৎসব জগৎ বিখ্যাত। পৌরাণিক আখ্যান অনুযায়ী, শান্তিপুরের বিখ্যাত মদনগোপাল বিগ্রহের রূপদান করা হয়। অদ্বৈতাচার্যের রাস উৎসবের বিশেষ প্রচার শুরু হয়। এক সব অদ্বৈত অনুগামী গোস্বামী বাড়িতে এই উৎসব পালিত হতে থাকে। রাস পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহকে ঘিরে নাম সংকীর্তন, রাত্রিকালীন বিশেষ পুজো, সাজসজ্জা ইত্যাদি হত। কথিত আছে, বড় গোস্বামীর সেই রাধারমণ আগে একা পুজিত হতেন। কিন্তু প্রায় ৩৫০ বছর আগে রাধারমণের এই বিগ্রহ একবার অন্তর্নিহিত হয়। লোকেরা বিশ্বাস করেন যে, শ্রীকৃষ্ণ একা আছেন বলেই হয়ত অন্তর্হিত হয়েছেন। ঠিক তখনই এক অষ্টধাতুর রাধিকা মূর্তি নির্মাণ করা হয় গোস্বামী বাড়িতে। এবং রাস পূর্ণিমার পূণ্য তিথিতে শ্রীরাধারমনের সেই যুগল মূর্তি স্থাপনা করা হয়।
তিনদিনের রাস উৎসব শেষে বৃহস্পতিবার শান্তিপুরের প্রতিটি বিগ্রহ বাড়ি কুঞ্জভঙ্গের অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে। এদিন রাসমঞ্চ থেকে পুনরায় বাড়ির অন্দরমহলে ফিরে গেলেন ইষ্টদেবতারা।
ভাঙা রাসের পরদিন হয় কুঞ্জভঙ্গের অনুষ্ঠান। বিরহের পর্ব যেমন থাকে এতে, তেমনই শেষে হয় যুগলের মিলন। এদিন সকাল থেকেই বড় গোস্বামী বাড়ির মূল মন্দির চত্বরে ভিড় জমান কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ। নিয়ম মেনে বাড়ির পুরুষেরা সকাল থেকেই উপবাসে থাকেন। স্নান শেষ করে শুদ্ধ বস্ত্র পরে রাসমঞ্চ থেকে রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ কোলে তুলে নেন। এরপর যুগলকে নিয়ে শুরু হয় কুঞ্জভঙ্গের ঠাকুর নাচ। ঢাকের নির্দিষ্ট তালে পা মিলিয়ে কৃষ্ণ এবং রাধিকা জুটিকে মুখোমুখি রেখে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলে নাচের পর্ব। নাচ শেষ হলে ঘরে ফেরার কীর্তন গান করতে করতে যুগলকে নিয়ে আসা হয় বাড়ির অন্দরে। বিশেষ ছন্দের এই কীর্তন গানে বৃহস্পতিবার দুপুরে গলা মিলিয়েছেন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার দর্শনার্থী। ঘরে ফেরার পর এদিন দুপুরে ইষ্টদেবতার চরণে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করেন বাড়ির গৃহিণীরা। এই একটি দিনেই কৃষ্ণের চরণ স্পর্শ করার অনুমতি মেলে। বড় গোস্বামী বাড়ির বহুমূল্যের অষ্টধাতুর বিগ্রহ প্রায় হাজার বছর পুরনো। সেকারণে নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকেই বিগ্রহ ছোঁয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে অন্যান্য বিগ্রহ বাড়িতে সবাই দেবতার চরণ ছুঁতে পারেন।
বড় গোস্বামী বাড়ির রাধারমণকে বৃহস্পতিবার দেওয়া হল প্রায় একশোরকম মিষ্টি ভোগ। উপবাস পালন করে এই একটি দিনেই কৃষ্ণের চরণ স্পর্শ করলেন বাড়ির গৃহিণীরা।
বড় গোস্বামী বাড়ির অন্যতম প্রধান সদস্য সত্যরঞ্জন গোস্বামী বলেন, রাসমঞ্চ থেকে মূল মন্দিরে নিয়ে আসার সময় বিগ্রহ হাজার হাজার মানুষের স্পর্শ পায়। তাই ঘরে ফেরানোর পর কৃষ্ণের পুনরায় অভিষেক হয়। লক্ষ লক্ষ টাকার সমস্ত অলঙ্কার খুলে কৃষ্ণকে স্নান করানো হয় প্রথমে। তাঁকে মূল মন্দিরের সিংহাসনে বসাতে বিকেল প্রায় ৪টে বেজে যায়। এরপর সন্ধ্যার সময় বাড়ির বিশাল বারান্দায় একে একে সাজানো হয় শতাধিক মিষ্টির ভোগ। তালিকায় থাকে রাধারমণের প্রিয় নাড়ু, মোয়া, মালপোয়া, পিঠে, গজা, পায়েস, ক্ষীর এবং দুধের হরেক রকমের মিষ্টি। বড় গোস্বামী বাড়ির ৪০টি বাড়ির শরিকের প্রত্যেকেই নিজের হাতে এই সমস্ত মিষ্টি তৈরি করেন।