বড়ির বিয়ে: সাথে বর-কনেযাত্রী, নেপথ্যে বাংলার বৈচিত্রপূর্ণ লোকসংস্কৃতি
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলার বৈচিত্রপূর্ণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে বড়ির বিবাহ-অনুষ্ঠান লক্ষ্য করা যায়। বড়ি এমন একটা জিনিস ডাল-ঝোল-অম্বলের সাথে অথবা গরম ভাতের পাতে সুস্বাদু মুচমুচে ভাজা যেন একাই একশো।
তবে জানেন কি কীভাবে প্রচলন হল বড়ির বিয়ে? শীতের সন্ধ্যেয় সুসজ্জিত ছাদনা তলায় জোড়া পানে মুখ ঢেকে শ্রী শ্রী প্রজাপতয়ে নমঃ – কল্যাণীয়া ওমুক বড়ির সঙ্গে কল্যাণীয় তমুক বড়ির শুভবিবাহ সম্পন্ন হইল। ব্যাপারটা ভাবলেই কেমন একটা রোমাঞ্চ হয়।
শীতের মরসুমে বাঙালির মনে এখনও বড়ির চাহিদা রয়ে গেছে। শহর পার করে মফস্সল কিংবা গ্রামে এখনও মহিলারা ডাল ফেনাতে শুরু করেন। অগ্রহায়ণ এলেই বড়ি দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যায়। তারপর দেওয়া হয় ‘বড়ির বিয়ে’। বড়ি দিয়ে তৈরি হয় বর-বৌ। দুব্বো দিয়ে বানানো হয় বরের টোপর। তুলসিপাতায় করা হয় বৌয়ের ঘোমটা । সিঁদুর দিয়ে সাজানো হয় কনে বড়িকে। বর-কনের পাশে আরও ছোটো ছোটো বড়ি থাকে, তারা হল বর ও কনেযাত্রী। বর ও বৌ বড়ির আকার অবশ্য অন্য সবগুলির চেয়ে বড়ো। তারিখ, তিথি, নক্ষত্র বদলালেও বড়ির বিয়ের দিনের কিন্তু বদল হয় না। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে প্রতি বছর অগ্রহায়ণের প্রথম বৃহস্পতিবার বড়ির বিয়ের প্রথা প্রচলিত আছে।
কেন দেওয়া হয় বড়ির বিয়ে? প্রচলিত ধারণা হল, বড়ির বিয়ে দিলে পরিবারের সবার কল্যাণ হবে। কেন, কবে, কে এই রীতি চালু করেছিলেন, তা জানেন না তিনি।মহিষাদল রাজবাড়ির গৃহকত্রীর কথায়, বিয়ের পর এ বাড়িতে আসার পর থেকে এই অনুষ্ঠান দেখে আসছেন তিনি। আগে তাঁর শাশুড়ি বড়ির বিয়ে দিতেন। সেই প্রথা মেনে এখন তিনি দেন। বড়ির বর, কনে তৈরি করার জন্য নতুন বিউলি ডাল প্রথমে বেটে ভালো করে ফেটিয়ে একটি পাথরের উপর বা পরিস্কার কোনও জায়গায় বড়ি দেওয়াই নিয়ম। বড়ির বিয়ে দিয়ে বড়ি বানানোর শুভ কাজ শুরু করার প্রথা এটা।
মহিষাদল ছাড়াও বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ‘বড়ির বিয়ে’ দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। নদীয়াতেও এর প্রচলন আছে। ছেলে বড়িকে লাল লঙ্কা আর মেয়ে বড়ির মাথায় বেগুনের ফুল দিয়ে সাজানো হয়। তারপর ধান, দুর্বা সহযোগে শঙ্খ ধ্বনি, উলু ধ্বনি দিয়ে বড়ির বিয়ে দেওয়া হয় এখানে। বড়ির বিয়ে প্রথার ভিন্ন ভিন্ন নামও রয়েছে, কোথাও ‘বড়িহাত’ আবার কোথাও ‘বুড়োবুড়ির বিয়ে’। তবে বড়ির প্রতি ভালোবাসা থেকেই হয়তো মহিষাদলের মল্লিক পরিবারে দু’টি বড়ির মধ্যে বিয়ে দেওয়ার প্রচলন হয় বলে জানা গিয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ বাংলার লোকশিল্প, কাবেরী দাস মহাপাত্র