বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

বাংলার ভাষার অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন খোঁজার কারিগর কি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী?

December 7, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: চর্যাপদের আবিষ্কার তাঁকে অমর করে গিয়েছে, নৈহাটির ভট্টাচার্য পরিবারের ছেলে তিনি। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আনুকূল্যেই এগিয়েছিল তাঁর জীবন। রামকমল ন্যায়রত্নর ষষ্ঠ সন্তান শরৎনাথ ছোট থেকেই রুগ্ন। শিবের কাছে মানত করে, শিবের কৃপায় সুস্থ হয়ে ওঠে সে ছেলে। শরৎনাথের নাম বদলে রাখা হয় হরপ্রসাদ।

তাঁর জীবন অক্লান্ত লড়াইয়ের দলিল। মাত্র আট বছর বয়সে বাবাকে হারান। চাকরি নিয়ে কান্দিতে চলে গেলেন হরপ্রসাদের দাদা। হরপ্রসাদও সঙ্গে গেলেন, আকস্মিক মৃত্যু হল নন্দকুমারের। গোটা পরিবারকেই ফিরে আসতে হল নৈহাটিতে। অনিশ্চিত হয়ে পড়ল জীবন। ১৮৬৬-তে বিদ্যাসাগরই হরপ্রসাদকে সংস্কৃত কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করে দিলেন। ডবল প্রমোশন পেয়ে ১৮৭১-এ কৃতিত্বের সঙ্গে এন্ট্রান্স পাস করলেন। সংস্কৃত কলেজ থেকে অনার্সে প্রথম হয়ে এমএ এবং শাস্ত্রী উপাধি লাভ করেন। বাংলা, সংস্কৃত, দর্শনে তুখোড় ছিলেন হরপ্রসাদ। সংস্কৃতে সাম্মানিক হওয়ার পরই ভট্টাচার্য বদলে যায় শাস্ত্রীতে। অধ্যাপনা এবং বেঙ্গল লাইব্রেরির গ্রন্থাকারিকের দায়িত্বের পাশাপাশি রাজেন্দ্রলাল মিত্রের সঙ্গেই কাজ করতে লাগলেন তিনি। প্রাচীন বাংলার পুঁথি নিয়ে কাজ আরম্ভ করলেন।

প্রাক ছাপাখানা আমলে পুঁথিই ছিল সাহিত্যের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। রাজেন্দ্রলালের মৃত্যুর পর এশিয়াটিক সোসাইটির পুঁথিসংগ্রহের কাজ দেখার দায়িত্বে এলেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। বাংলা ভাষার ইতিহাস খুঁজতে নেপাল গেলেন হরপ্রসাদ।

১৮৯৭ সালে প্রথমবার নেপালের মাটিতে পা রাখলেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, হাজির হলেন কাঠমান্ডুর রাজদরবারের গ্রন্থাগারে। তালপাতার পুঁথিগুলোর হদিশ পেলেন তিনি। পরের বছর, ১৮৯৮ সালে আবার গেলেন নেপালে। দুটি পুঁথি পেলেন- সুভাষিত সংগ্রহ ও দোঁহাকোষ পঞ্জিকা।

দশ বছর পর, ১৯০৭ সালে ফের নেপালের রাজদরবারে হাজির হলেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। গ্রন্থাগারে খুঁজে পান একটি তালপাতার পুঁথি। তাতে বৈষ্ণব কীর্তনের মতো বেশ কিছু পদ লেখা রয়েছে, পুঁথির নাম- ‘চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়’। প্রায় এক দশক পর ১৯১৬ সালে প্রকাশিত হল ‘হাজার বছরের পুরান বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধগান ও দোঁহা’। রচয়িতা হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। দীর্ঘদিনের নেপাল যাত্রার ফলাফল প্রকাশিত হল বইতে। ‘চর্যাপদ’ প্রকাশ্যে এল। জানা গেল, আদপে বৌদ্ধ পদগুলি আসলে বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন। তালপাতার পুঁথিটির বেশ কিছু পাতা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তিনটে সম্পূর্ণ চর্যা ও একটির অর্ধেক পাওয়া যায়নি। মোট ২৪ জন পদকর্তার নাম জানা গেল। সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ্যে এল বাংলা ভাষার প্রাচীনতম উৎস-মুখ।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bangla bhasa, #haraprasad sastri, #bengalilanguage

আরো দেখুন