শীতের পর্যটকদের জন্য প্রস্তুত ইছাই ঘোষের দেউল, নেওয়া হচ্ছে সতর্কতাও
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আমাদের কাছেপিঠেই এমন জায়গা রয়েছে যেখানে প্রকৃতির সঙ্গে মেলে ইতিহাসের ছোঁয়াও। এমনই একটি জায়গা, ইছাই ঘোষের দেউল। যাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটনকেন্দ্র। দেউল পার্ক অবস্থিত পশ্চিম বর্ধমান আর বীরভূমের সীমান্তে। অজয় নদীর পাড়ে রয়েছে দেউল পার্ক। নদী পেরোলেই পৌঁছে যাবেন বীরভূমে। ঐতিহাসিকদের মতে, দেউল পার্ক সংলগ্ন জায়গাটি ছিল রাঢ়বঙ্গের রাজা ইছাই ঘোষের রাজধানী। এই জায়গায় বসেই, রাঢ়বঙ্গের একাধিক জায়গায় নিজের শাসন বিস্তার করেছিলেন ইছাই ঘোষ।
শোনা যায় গৌড়ের রাজা যখন দেবপাল, তখন কাঁকসার জঙ্গল ঘেরা ত্রিষষ্টিগড়ের সামন্ত রাজা ছিলেন কর্ণ সেন। তাঁর আশ্রিত সোম ঘোষের পুত্র ছিলেন ইছাই ঘোষ। তিনি ত্রিষষ্টিগড়ের মধ্যেই আলাদা ঢেকুরগড় স্থাপন করেন এবং নিজেকে স্বাধীন রাজা হিসেবে ঘোষণা করেন। ইছাই ঘোষের এই দম্ভ মেনে নেননি কর্ণ সেন। শুরু হয় যুদ্ধ। ইছাই ঘোষের সঙ্গে যুদ্ধে কর্ণ সেন হেরে যান। জয়ের স্মারক হিসেবে ইছাই ঘোষ গড়ে তোলেন এই সুউচ্চ দেউল।
ইছাই ঘোষের দেউলে প্রতিবছরের মতো এবারেও শীতে বহু মানুষ ভিড় জমাবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেকেই এখানে আসেন পিকনিক করতে। তবে পিকনিকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থার্মোকল ও প্লাস্টিক। উচ্চস্বরে বক্স বাজানোতেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। নিয়ম পালন হচ্ছে কি না দেখার জন্য থাকবে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, প্রতিবছর বহু মানুষ দেউলে আসেন পিকনিক করতে। দেউল ছাড়াও এখানে শ্যামরূপা মন্দির, কালিকাপুর রাজবাড়ি, বনকাটি রথের মন্দির, জয়দেব কেঁদুলি সব একই সঙ্গে তাঁরা ঘুরে দেখতে পারেন। তাছাড়া দেউলে হরিণ ও ময়ূরদের জন্য সংরক্ষিত এলাকায় রয়েছে। সেটিও বর্তমানে দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। দুর্গাপুজো ও শীতের মরশুমে বহু মানুষ আসেন ঐতিহাসিক স্থান দু’টি দেখার জন্য। এলাকার অর্থনীতিও চাঙ্গা থাকে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ দেউল ও শ্যামরূপা মন্দিরে আসার রাস্তার বেশ কিছুটা অংশ খারাপ বলে অভিযোগ করেছেন।
এক সময়ে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকায় বাইরের লোক, এমনকী স্থানীয়দেরও বেশি আনাগোনা ছিল না। তবে এখন বহু মানুষ আসছেন। কাঁকসা পঞ্চায়েতের তরফে জানানো হয়েছে, পিকনিক করতে এসে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য প্রশাসন সতর্ক দৃষ্টি রাখবে প্রশাসন। থার্মোকল ও প্লাস্টিকের ব্যবহার একেবারেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উচ্চস্বরে বক্স বাজানো নিষিদ্ধ। পাশেই রয়েছে হরিণ এবং ময়ূরদের সংরক্ষিত এলাকা। অতিরিক্ত আওয়াজে বন্যপ্রাণীদের যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে জানা যাচ্ছে, নেশা করে যাতে ওই এলাকায় কেউ ঢুকতে না পারে তার ব্যবস্থা করা হবে।