বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

বিনয় মজুমদার, এমন এক কবি যাঁর গোটা জীবনটাই কাব্য

December 11, 2023 | 2 min read

বিনয় মজুমদার, এমন এক কবি যাঁর গোটা জীবনটাই কাব্য

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: বিনয় মজুমদারের জীবনখানা যেন আস্ত একখানা কাব্য, জাপটে ধরে ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’। বিনয়ের কথায়, ‘জড়, উদ্ভিদ, কীট পতঙ্গ, মানুষ সবার সৃষ্টিরহস্য এক। সে কথা উপলব্ধির পরেই শুরু হল কবিতা নিয়ে পথ চলা, আমার নিজস্বতা।’ স্কিৎজোফ্রেনিয়া তাঁর কবিতাকে মুছে দিতে পারেনি। কর্মজীবন, হাসপাতাল আর পাগলা গারদের সময়টুকু বাদ দিলে গোটা জীবন তিনি স্বেচ্ছানির্বাসনেই কাটালেন। উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগর স্টেশন ছোঁয়া শিমুলপুর ছিল তাঁর ক্যানভাস। মাথা খারাপ হতে শুরু করেছে তখনও তিনি লিখছেন। নয়ের দশকে পাগলা গারদে বসেও কোনও কোনও সম্পাদককে বেছে দিয়েছেন পত্রিকার জন্য কবিতা।

বা‌ংলা কবিতার ইতিহাসে বিনয় মজুমদারই একমাত্র কবি, যাঁর লেখা সরাসরি বই আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। কোনও পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রকাশের আগেই বই প্রকাশ পেয়েছিল। বইয়ের নাম ‘নক্ষত্রের আলোয়’। গ্রন্থজগৎ প্রকাশনার দেবকুমার বসু, তাঁর পাণ্ডুলিপি পড়ে নিজ উদ্যোগেই বইটি প্রকাশ করেছিলেন। বিনয়ের বেশির ভাগ বইয়েরই প্রকাশক দেবকুমার, এমনকি বহুল চর্চিত ‘ফিরে এসো চাকা’ও।

বিনয়ের কবিতায় তাঁর ব্যক্তিজীবন আর কবি জীবন অবলীলায় মিলে মিশে এক হয়ে গিয়েছে। কখনও তিনি মৌনব্রত নিয়েছেন আবার কখনও জীবনের গুরুগভীর মনস্তত্ত্বকে তুলে ধরেছেন। বছরের পর বছর যাবৎ একটি শব্দ না লেখার কঠিন জেদকেও লালন করেছেন। থেকেছেন আড়ালে, থুরি বিচরণ করেছেন নিজের জগতে। স্কিৎজোফ্রেনিয়া যখন গ্রাস করেছে, তখনও জ্যামিতির উপপাদ্য এঁকেছেন একেবারে নির্ভুল। জীবনের চাকাকে তিনি চালিয়েছেন নিজের মতো। বিপিনবিহারী মজুমদার এবং বিনোদিনী দম্পতির ছয় সন্তানের মাঝে বিনয় মজুমদার ছিলেন সবচেয়ে ছোট। দেশভাগ দেখেছিলেন খুব কাছ থেকে, ১৯৫১ সালে আইএসসি পড়ার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন।

তিনি নিজেকে বলতেন, আমি ভারতের প্রথম চাঁড়াল কবি। বলতেন, কয়েক জনকে চাঁড়াল কবি বানানোর চেষ্টা করছি। তাই বিনয় মজুমদার বলেই লিখতে পারেন,
ফিরে এসো, ফিরে এসো, চাকা, রথ হয়ে, জয় হয়ে, চিরন্তন কাব্য হয়ে এসো।
আমরা বিশুদ্ধ দেশে গান হবো, প্রেম হবো, অবয়বহীন সুর হয়ে লিপ্ত হবো পৃথিবীর সকল আকাশে।
২০০০ সাল বন্যা, চারিদিকে জল। সম্পাদকদের কাছ থেকে আসা লেখার সমস্ত অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছেন বিনয় ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয় ‘হাসপাতালে লেখা কবিতাগুচ্ছ’ কাব্যগ্রন্থটি। শেষ কাব্যটিতেও হাসপাতালের নানা প্রসঙ্গ এসেছে। আদপে তাঁর জীবনটাই হয়ে উঠেছে একটা আস্ত কাব্যগ্রন্থ, যেখানে প্রতি পাতায় লেখা হয়েছে কবিতা। তিনি ছিলেন কাব্যোন্মাদ।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#poet, #death anniversary, #Poem, #binoy majumdar

আরো দেখুন