দুনিয়ার মুখে হাসির ফোটানোর কারিগর শিবরাম, কিন্তু প্রদীপের তলায় আঁধারের বসতি?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মুক্তারামের তক্তারামে শুয়ে শুক্তারাম খেয়ে শিবরাম অক্সিজেন দিয়ে গিয়েছেন ‘বাঙালির রসবোধ’। বাংলা সাহিত্যের উচিত মেস বাড়ির কাছে ঋণী হাওয়া কারণ শরদিন্দুর ব্যোমকেশ থেকে শিবরামের রসবোধ সবকিছুই মেসের দান। মুক্তারামে বসে তক্তারামে শুয়ে শুক্তারাম খেয়ে শিবরাম একের পর এক হাস্যরসাত্মক গল্প সৃষ্টি করে গিয়েছেন। হাসির আড়ালেও তাঁর জীবন ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসার মানে বোঝায়। বলতেন, লেখক হয়েছেন নিতান্ত পেটের দায়ে। “গায়ের জোর নেই বলে রিকশা টানতে পারি না তার বদলে কলম টানি। কলমের ওপর টান আমার এইটুকুই।” পেয়ারা সন্দেশ বা রাবড়ি পেলেই হল। বলতেন, নেশা করলে রাবড়ির নেশা করাই শ্রেয়। রাবড়ি কুলকুচি করে ফেলে দিতে হয়, তবে বাইরে নয়! পেটের ভিতরে। হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনরা তাঁর আপনার জন, চাইতেন ছোটরা তাঁর লেখা পড়ুক। বড় হলে ভুলে যাবে, ছোটরা পড়ুক এই ছিল তাঁর বাসনা। কেন এমন একটা জীবন কাটালেন তিনি? তাঁর লেখায় এতো হাসি! তাঁর জীবনে এতো দুঃখের বসবাস?
মৃত্যুর ৫ মিনিট আগে ‘ফার্স্টক্লাস’ আছি বলে চলে গিয়েছিলেন শিবরাম। হাসির লেখায় নিজের দুঃখকেও সেভাবে আড়াল করেছেন তিনি। রিনি, যার সঙ্গে শিবরামের ছিল প্রেম তবে হয়তো সে প্রেমের প্রকাশ ছিল না। মা হাতে দিলেন দুটো বড় বড় তালশাঁস সন্দেশ। ঘুম থেকে উঠে সন্দেশ পেয়েই রিনি বাড়ি ছুট, একা একা কী সন্দেশ খাওয়া যায়? রিনির সঙ্গে ভাগ না করে খাওয়া যায় না। দুটো সন্দেশ একসঙ্গে রিনির মুখের ভিতর। কিন্তু শিবরাম তো খাননি! রামদা খায়নি শুনতেই, মুখ থেকে সন্দেশ বের করে শিবরামকে খাইয়ে দিয়েছিল রিনি। তারপর ফোঁটা দেওয়া পালা। রিনির মা বললেন, ‘তোর রামদাকে ফোঁটা দে।’ ফোঁটা দিল, প্রণামও করল। হাসির রাজার জীবনে সেই একমাত্র মেয়ে।
চাঁচোলে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের বক্তৃতা শুনে এক কাপড়ে কলকাতায় চলে এসেছিলেন শিবরাম। চিত্তরঞ্জনের দেওয়া ১০ টাকায় বই-খাতা না কিনে, সিনেমা দেখে, খেয়ে উড়িয়ে দিলেন। তারপর মেসের ঘর জুটল না। শুরু হল বোহেমিয়ান নিয়ে। লঙ্গরখানার খাবার, আর ডেরা হল ফুটপাত। দিন গুজরানের জন্য খবরের কাগজ ফেরি করা শুরু। যা রোজগার সবই উদরস্থ। তারপর মুক্তরাম বাবু স্ট্রিটের ক্ষেত্র কুঠি হয়ে উঠল শিবরামের ঠিকানা।
দেশবন্ধুর সুপারিশে নেতাজির আত্মশক্তি পত্রিকায় শিবরামের চাকরি জুটল। আফিসে অ্যালার্জি শিবরামের। চাকরি গেল, শিবরাম যেন চাকরি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে কিনলেন যুগান্তর পত্রিকা। কিন্তু রাজরোষে হাজতবাস। প্রেসিডেন্সি হয়ে ঠিকানা হল বহরমপুর জেলে। কিন্তু সব কিছুকেই হাসি মুখে গ্রহণ করেছেন শিবরাম। কলমের ডগা থেকে যখনই কালি ঝরেছে, ঝরে পড়েছে হাসি।