মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত কি? প্রচলনের নেপথ্যে কোন কাহিনি?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে পালন করা হয় মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত। ছেলে মেয়ে দুজনই এই ব্রত পালন করতে পারেন। মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত খুবই কঠিন কারণ শরীর খুব ভালো না থাকলে এটি পালন করা সম্ভব হয় না। ভক্তদের বিশ্বাস, ভক্তিভরে এই ব্রত পালন করলে সকল মনের বাসনা পূরণ হয় এবং দেহত্যাগের পর লক্ষ্মীনারায়ণের পাদপদ্মে তাঁদের স্থান হয়।
জানা গিয়েছে, দিনের বেলা পুরোহিত কে দিয়ে বিষ্ণু পুজো করিয়ে সারাদিন উপোস করে থাকতে হবে। তারপরে রাতে চাঁদ উঠলে সেই চাঁদ দর্শন করে, তাঁকে অর্ঘ্য দিতে হয়।এই ব্রতর উপকরণে লাগে ফুল, তুলসী ,দূর্বা, দীপ, ধূপ ,বিষ্ণুর নৈবেদ্য আতপ চাল, মিষ্টান্ন, ফল, ভুজ্যি একটি এবং দক্ষিণা।
শেষের দুধ ও ফল খেয়ে কম্বল বা খড়ের বিছানায় একলা শয়ন করে রাত কাটান নিয়ম। পরে সকালে উঠে স্নান করে পুরোহিত কে ভুজ্যি আর দক্ষিণা দিয়ে ব্রত শেষ করায় বিধি।
জেনে নিন এই ব্রতের পেছনে প্রচলিত কাহিনি
অনেক আগেকার কথা, কল্যাণগড়ে মাধব সিং নামে এক রাজা ছিলেন। তার এক কন্যা সন্তান ছিল, তার নাম মাধুরী। মাধুরী পড়াশোনা, যুদ্ধ বিদ্যা সব কিছুতেই পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু একদিন রাজা লক্ষ্য করলেন মেয়ে দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। তার রোগ নির্ণয় করতে রাজ বৈদ্য এলেন কিন্তু কোনও রোগ আর ধরা পড়ে না, দিনের পর দিন তা বাড়তেই থাকল। শঙ্কিত রাজা ঘোষণা করে দিলেন, যে তার কন্যাকে কে সুস্থ করতে পারবে তার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবেন।
অন্য দিকে, পাশের রাজ্য বলাগড়। রাজার নাম যাদবেদ্র দেব। তার পুত্ৰের নাম শশধর। এরা প্রতিবেশী রাজ্য হলেও সামান্য কারণে এদের মধ্যে যুদ্ধ লেগে থাকত। কারও সঙ্গে কারও মুখ দেখাদেখি ছিল না। কিন্তু শশধর ও মাধুরী ছোটো থেকে এক সাথে খেলাধুলো করেছিল আর বড় হবার সাথে সাথে তাদের বন্ধুত্ব প্রেমে পরিণত নিয়েছিল। কিন্তু তাদের পিতাদের মধ্যে বিবাদের কারণে এই কথা তারা প্রকাশ পেতে দেয়নি।
মাধুরী কে ভালোবাসলেও তাকে পাবার উপায় নাই জেনে শশধর সবসময় মনমরা হয়ে থাকতেন। এমনি একটি দিনে তিনি বাগানের পুকুর পাড়ে বসে মাধুরীর কথা ভাবছিলেন, তাঁর চোখ ঘুমে জুড়িয়ে আসছিল, এমন সময় তিনি স্বপ্নে দেখলেন এক সুপুরুষ তাঁকে বলছেন, “তুমি দুঃখ কোরো না তোমার মনোবাসনা অবশ্যই পূরণ হবে। কাল সকাল বেলায় সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশ নিয়ে তুমি কল্যাণগড় গিয়ে রাজা মাধবসিংকে বলে আসবে তার কন্যাকে তুমি ঠিক করে দিতে পারবে। বাড়ি এসে শশাঙ্কদেবের পুজো করে সেই মালা তুমি মাধুরীর গলায় পরিয়ে দেবে। তাহলে সে রোগ মুক্ত হবে আর তোমার সাথেই তার বিয়ে হবে।”
সেই মতো শশধর রাজার কাছে সন্ন্যাসীর বেশে গিয়ে রাজার মেয়েকে ঠিক করে দেওয়ার কথা দিয়ে এলেন। তারপর বাড়ি ফিরে শশাঙ্কদেবের পুজো করে সেই মালা নিয়ে গিয়ে মাধুরীর গলায় পরিয়ে দিতেই মাধুরী রোগমুক্ত হল। রাজা তো ভীষণ খুশি। পরদিনই শশধর রাজ সভায় পৌঁছলে রাজা তাঁর সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দেবার জন্য তাঁকে অন্দরমহলে পাঠিয়ে দিলেন। সেখানে নাপিত তাঁর সন্ন্যাসীর বেশ ছাড়ানোর সময় জানতে পারলেন তিনি প্রতিবেশী দেশের রাজকুমার শশধর। রাজার কাছে এই খবর গেলে তিনি মন্ত্রী পাঠিয়ে বলাগড়ের রাজা যাদবেদ্র দেবকে ডেকে পাঠালেন এবং ওনার সম্মতি নিয়ে ধুমধাম করে মাধুরী আর শশধরের বিবাহ দিলেন। দুই রাজা নিজেদের বিবাদ মিটিয়ে আত্মীয়তার বাঁধনে আবদ্ধ হল। এই ভাবে মাধুরী আর শশধরের মনস্কামনা পূরণ হয়েছিল। তাঁরা যতদিন বেঁচে ছিলেন মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত পালন করে ছিলেন এবং প্রচার করেছিলেন।
তথ্যসূত্র: মেয়েদের ব্রতকথা- লেখক- আশুতোষ মজুমদার, দেব সাহিত্য কুটির