বাংলায় পৌষ মাসের অন্যতম ব্রত ‘তোষলা’ – কেন করা হয় জেনে নিন
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: গ্রাম বাংলায় পৌষ মাসের অন্যতম ব্রত উদযাপনের পালা ‘তোষলা’ ব্রতটি। কোথাও একে বলে ‘তুঁষতুষলি’। পূর্ববঙ্গে এবং পশ্চিমবঙ্গে দু জায়গায় এই ব্রতের চলন আছে।
পৌষ মাসে প্রতিদিন সকালে মেয়েরা এই ব্রতটি করে। ব্রতের বিধি এই; অঘ্রানের সংক্রান্তি থেকে পৌষের সংক্রান্তি পর্যন্ত প্রতি সকালে স্নান করে গোবরের ছ-বুড়ি ছ-গণ্ডা বা ১৪৪টি গুলি পাকিয়ে, কালো দাগশূন্য নতুন সরাতে বেগুনপাতা বিছিয়ে তাঁর উপরে গুলি ক’টি রাখতে হয়। প্রত্যেক গুলিতে একটি করে সিঁদুরের ফোঁটা এবং পাঁচগাছিকরে দূর্বাঘাস গুঁজে দিতে হয়। তাঁর উপরে নতুন আলোচালের তুঁষ ও কুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়ে, সরসে শিম মূলো ইত্যাদি ফুল দিয়র ছড়া বলা হয়।
এই ব্রতের নাম এবং উপকরণগুলি থেকে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, এটি সারমাটি দিয়ে ক্ষেত উর্বর করে তলায় ব্রত।ব্রতের ছড়াগুলি পূর্ববঙ্গে এক, পশ্চিমবঙ্গে আর-এক হলেও ছড়াগুলি পড়তে পড়তে পল্লীগ্রামের সহজ জীবনযাত্রার এমন একটি পরিষ্কার ছবি মনে জাগিয়ে তোলে, যেটা কোনো শাস্ত্রীয় ব্রতে পাওয়া যায় না।
পৌষমাসে এদেশে বেশ একটু শীত, এবং সকালবেলার ব্রত এটি, কাজেই নতুন সরায় বেগুনপাতা চাপা দিয়ে, সারমাটি নিয়ে মেয়েরা দলে দলে তোষলা ব্রত করতে ক্ষেতের দিকে যায় এবং সেখানে মূলোর ফুল, শিমের ফুল, সরষের ফুল দিয়ে ব্রত আরম্ভ করে।
প্রথমে হয়, তোষলার স্ততি–
তুঁষ-তুঁষলি,তুমি কে।
তোমার পূজা করে যে--
ধনে ধানে বাড়ন্ত,
সুখে থাকে আদি অন্ত।।
তোষলা লো তুঁষকুন্তি।
ধনে ধানে গাঁয়ে গুন্তি,
ঘরে ঘরে গাই বিঊন্তি।।
তাঁর পর অনষ্ঠান-উপকরণের বর্ণনা, যেমন–
গাইয়ের গোবর, সরষের ফুল,
আসনপিঁড়ি, এলোচুল,
গেয়ের গোবরে সরষের ফুল
ঐ ক’রে পূজিন আমার মা-বাপের কুল।
‘আসনপিঁড়ি, এলোচুল’।
এখানে গ্রামের মেয়েদের এলোচুলে ব্রত করার প্রতিচ্ছবিটি দেখতে পাওয়া যায়। এর পরে মেয়েরা তোষলা ব্রতের কামনা জানায় —
কোদাল-কাটা ধন পাব,
গোহাল-আলো গোরু পাব,
দরবার-আলো বেটা পাব,
সভা-আলো জামাই পাব,
সেঁজ-আলো ঝি পাব,
ঘর করব নগরে,
মরব গিয়ে সাগরে,
জন্মাব উত্তম কুলে,