পৌষের সধবা ব্রত পাটাই ষষ্ঠী, জানুন এই ব্রত প্রচলনের প্রাচীন কাহিনি
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: বাঙালির মেয়েলি ব্রতগুলির মধ্যে অন্যতম সধবা ব্রত অন্নরুপা পাটাইষষ্ঠী ব্রত। বাংলার গ্রামগুলিতে মূলত হিন্দুঘরের মহিলারা সন্তানের আয়ুবৃদ্ধির কামনায় এই ব্রত পালন করে থাকেন। পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে পাটাই ষষ্ঠী পালন করা হয়। জেনে নিন এই ব্রতের নেপথ্যে প্রচলিত কাহিনি।
এক দেশে এক বিধবা বামনী তার ছেলে ও ছেলের বউকে নিয়ে বাস করত। বামনীর বৌমা ছিল বড় ছেলেমানুষ ও লোভী প্রকৃতির। ঠাকুর দেবতা বলে কিছু সে মানত না। তার শাশুড়ি সন্দেশ মিষ্টি যা ঠাকুরকে নৈবেদ্য দিত, সে তার থেকেই তুলে নিজের মুখে দিয়ে দিত। বামনীর বৌমার ছেলেপুলে জন্ম নিয়ে সকলে মারা যেত। আর এই নিয়ে বামনীর মনে খুবই দুঃখ ছিল। সে নাতিপুতির আশায় ঘুরে বেড়ায় আর পাড়ার লোকেদের কাছে তার বৌমার ভাগ্যের কথা জানায়। এইসব শুনে পাড়ার এক গিন্নিবউ বলে পৌষের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে তার বৌমা যদি পাটাইষষ্ঠীর ব্রত করে, তাহলে মা ষষ্ঠীর আশীর্বাদে সব ঠিক হয়ে যাবে। এই কথা শুনে বামনী তার উঠোনে পাটাই ষষ্ঠী পুজোর আয়োজন করে। কিন্তু পুজোর থালায় নানারকম প্রসাদ সাজিয়ে রাখা দেখে বামনীর বৌমার খুব লোভ হয়। সে ভাবে কখন পুজো শেষ হবে আর সে প্রসাদ খেতে পাবে। এই ভাবতে ভাবতে কাপড় না ধুয়ে সে ঘাটে বসে থাকে। তারপর শাঁখের শব্দে তার টনক নড়ে। সে তখন তাড়াতাড়ি পুকুরে একটা ডুব দিয়ে দৌড়ে বাড়ি আসতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারায়।
ওই দিকে বামনী পুজোর সব আয়োজন ঠিকঠাক করে রাখে এবং পুরোহিত এসে পুজো করে যায়। পাড়ার এক বউ পাটাইষষ্ঠী পুজোর প্রসাদ নিতে বামনীর বাড়ি আসছিল। রাস্তায় সে দেখে বামনীর বৌমা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে। সে তাড়াতাড়ি বামনীকে খবর দিলে বামনী এসে তার বৌমার মুখে জলের ছিটে দেয়। বৌমার জ্ঞান ফিরলে বামনী তাকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পড়িয়ে পাটাইষষ্ঠীর ঘটের কাছে বসিয়ে ব্রত কথা পাঠ করায়। বৌমাকে মা ষষ্ঠীর কাছে বর চেয়ে নিতে বলে। বৌমা শাশুড়ির কথা মতো ঢিপ ঢিপ করে মাথা ঠুকে মা ষষ্ঠীর কাছে প্রার্থনা জানায়। এরপর বছর ঘুরলে বউয়ের চাঁদের মত ছেলে হয় এবং তারা সুস্থ হয়ে বড় হয়ে ওঠে। তারপর বামনী দেখে বৌমার লোভও চলে যায়। এরপর থেকে বামনীর বৌমা প্রতি বছর এই পাটাই ষষ্ঠীর ব্রত পালন করতে থাকে। আর তাদের দেখাদেখি গ্রামের মানুষও এই পাটাইষষ্ঠীর ব্রত পালন করতে থাকে।
তথ্যসূত্র:-
মেয়েদের ব্রতকথা- লেখক: আশুতোষ মজুমদার
মেয়েদের ব্রতকথা- লেখক: গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য